শীতকালীন রোগের ছড়াছড়ি! হাসপাতালগুলি কতটুকু মোকাবেলা করতে পারছে?
ঢাকায় শীতের তীব্রতা এখনো কম হলেও দেশের অন্যান্য স্থানে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। আর এতে করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতকালীন নানা রোগের বিস্তার দেখা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত দেড় মাসে শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৯,৫১৭ জন এবং মারা গেছে ৩১ জন। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের সেবা দিতে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত নেবুলাইজার ও অক্সিজেন সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
চিকিৎসকরা জানান, শীতে সাধারণত ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও ডায়রিয়ার মতো রোগগুলো বৃদ্ধি পায়। আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়া ও বাতাসে ধূলাবালি বৃদ্ধির ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
শীতে শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া যাদের অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনে ফ্লুর ভ্যাকসিন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া রোগী অনেক বেড়েছে। এখন ঠান্ডা, কাশি, অ্যাজমা নিয়েও হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন পর্যন্ত রোগীর চাপ সামলাতে পারছি। তবে রোগীর চাপ আরো বাড়লে বেড বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।"
অধ্যাপক মাহবুবুল হক পরামর্শ দেন যে, শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে ধুলাবালি থেকে সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক পরাতে হবে। শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিলে, সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে গেলে, জ্বর থাকলে, শ্বাস নেয়ার সময় কোন শব্দ হলে, বমি হলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। আর কোল্ড ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।''
হাসপাতালে চাপ বাড়ছে
শিশু হাসপাতালের ২০ বেডের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে গতকাল (রোববার) কোন সিট খালি ছিলোনা। এক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার রোগীকে এখন মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে ৮০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. দবির আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়া, হুপিং কফ, অ্যাজমা আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি, বড়দের মধ্যে অ্যাজমার সমস্যা বেশি। শীত ছাড়াও আশুলিয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে; সে কারণে ধুলার প্রকোপ বেড়ে অ্যাজমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যাও বাড়ছে।"
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ঈশিতা বিশ্বাস টিবিএসকে বলেছেন, "হাসপাতালে ও প্রাইভেট চেম্বারে শ্বাসকষ্ট, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাজমা ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি পাচ্ছি। এখন বাইরে বের হলে মাস্ক পরা উচিত।"
যে-সব অঞ্চলে রোগের বিস্তার বেশি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত চট্টগ্রাম বিভাগে, ২৫,২৪৯ জন। আর এতে এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ জন মারা গেছে, যা এখন পর্যন্ত কোন বিভাগে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "ময়মনসিংহে শীতের প্রকোপ অনেক বেড়েছে। রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় আমাদের বিভাগে শীতকালীন রোগে মৃত্যু বেশি। নিউমোনিয়াসহ শীতকালীন বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, রোগ হলে কী করতে হবে সেসব নিয়ে আমরা সতর্কতামূলক বার্তা মানুষকে দিচ্ছি।"
হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান পরিচালক টিবিএসকে বলেন, "শীতকালীন রোগে আক্রান্তদের সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতালগুলোকে আগামী ১৭ তারিখ আমরা একটি নির্দেশনা দেব। সব হাসপাতালের ভাঙ্গা জানালা ঠিক করা হবে, কোন ছিদ্র থাকলে বন্ধ করা হবে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত নেবুলাইজার, অক্সিজেন ও কম্বল সরবরাহ করা হবে।"