পাকিস্তানে সন্ধান পাওয়া নিখোঁজ ভারতীয় নারী ২২ বছর পর দেশে ফিরলেন
২২ বছর পাকিস্তানে আটকা পরা ভারতীয় নারী হামিদা বানু (৭৫) অবশেষে নিজ দেশে ফিরেছেন। ১৮ মাস আগে তার নাতি ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
হামিদা বানু জানান, তিনি গত ২২ বছর পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং নিজেকে "একটি জীবন্ত মৃতদেহ" মনে করতেন, কারণ তিনি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
২০০২ সালে দুবাইতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ তার নাগরিকত্ব যাচাই করার পর অক্টোবর মাসে তার ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
হামিদা বানু বলেন, "দুবাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি ২৩ বছর ধরে [এই বিচ্ছেদ] সহ্য করেছি।"
পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাক্টিভিস্ট ওয়ালিউল্লাহ মারুফ ২০২২ সালে তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে সেটি ইউটিউবে পোস্ট করেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতীয় সাংবাদিক খালফান শেখ সেই ভিডিওটি দেখেন এবং সেটি নিজের প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করেন। এতে তার জীবনের গল্প ২০২২ সালের জুলাই মাসে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল।
২০২২ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানের ভরণপোষণের জন্য ২০০২ সালে তিনি কাতার, দুবাই এবং সৌদি আরবে রান্না করে পরিবারকে সাহায্য করতেন। একদিন এক নিয়োগ এজেন্ট তাকে দুবাইয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০ হাজার রুপি (২৫০ ডলার) নেওয়ার পর পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদে নিয়ে যান এবং তিন মাস একটি বাড়িতে বন্দী রাখেন।
পরে তিনি করাচির একজন হকারকে বিয়ে করেন। কিন্তু তার স্বামী কোভিড-১৯ মহামারির সময় মারা যান। তিনি জানান, তার স্বামী কখনও তাকে বিরক্ত করেননি।
হামিদা বানুর নাতি ১৮ মাস আগে ইউটিউবে ভিডিওটি দেখে তাকে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে ওয়ালিউল্লাহ মারুফ এবং খালফান শেখ ভারতে তার পরিবারের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন।
ভিডিও কলের মধ্যে হামিদা বানুর মেয়ে ইয়াসমিন তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, "কেমন আছো? আমাকে চেনো? এত বছর কোথায় ছিলে?"
হামিদা বানু উত্তর দেন, "আমাকে কোথায় ছিলাম আর কেমন ছিলাম, সে প্রশ্ন করো না। আমি তোমাদের অনেক মিস করেছি। আমি এখানে থাকতে চাইনি, আমার আর কোনো উপায় ছিল না।"
সোমবার ভারতে ফিরে আসার পর হামিদা বানু জানান, ২০২২ সালের ভিডিওটি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, "আমার ভিডিওটা দুই বছর আগে শেয়ার হয়েছিল। আমি জানতাম না যে আমি ভারতে পৌঁছাতে পারব। কিন্তু এক বছর আগে ভারতীয় দূতাবাস আমাকে ফোন করে বলেছিল, 'আপনি ফিরে আসতে পারবেন।'"
বিবিসির সাথে কথা বলার সময় হামিদা বানু জানান, তিনি তার সন্তান এবং ভাইবোনদের কাছে ফিরতে পেরে খুশি।
তিনি বলেন, "আমার ভাই, বোন, সন্তানরা সেখানে [ভারতে] আছেন। তবে আমি চাই না আমি কারও উপর বোঝা হয়ে থাকি।"