আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা-বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।
পদ ও পদোন্নতিসহ সামগ্রিকভাবে জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়েছে। এক পক্ষে রয়েছে শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডার, আরেক পক্ষে আছেন অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এই ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামে একটি সংগঠনও গড়ে তোলা হয়েছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ আলোচনায় আসার পর থেকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ক্যাডার কর্মকর্তারা তাঁদের দাবি নিয়ে প্রতিবাদ সভা, জমায়েত, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সরব বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ৩ জানুয়ারি সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এ রকম পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, জনসেবা প্রদান এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সরকারি কর্মচারীদের সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল ও পেশাদার আচরণের ওপর জনপ্রশাসনের সফলতা নির্ভর করে। সম্প্রতি বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মচারীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচি পালনের কারণে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত, আদেশ বা সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিবেচ্য বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্যসহ বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে, যা 'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯' এর পরিপন্থী।
বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ নম্বর বিধির পুরোটাই তুলে ধরা হয়েছে।
ওই বিধিতে বলা হয়েছে:
(ক) সরকারের অথবা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পালনে জনসম্মুখে আপত্তি উত্থাপন করতে বা যে কোনো প্রকারে বাধা প্রদান করতে পারবেন না, অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তা করার জন্য উত্তেজিত বা প্ররোচিত করতে পারবেন না।
(খ) সরকারের বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ সম্পর্কে জনসম্মুখে কোনো অসন্তুষ্টি বা বিরক্তি প্রকাশ করতে অথবা অন্যকে তা করার জন্য প্ররোচিত করতে অথবা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বা অন্যকে অংশগ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারবেন না।
এ ছাড়া বিধিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন বা বাতিলের জন্য অনুচিত প্রভাব বা চাপ প্রয়োগ করতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যে কোনোভাবে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে অথবা অন্যকে প্ররোচিত করতে বা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবেন না।
এই বিধি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, 'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯' এর যে কোনো বিধান লঙ্ঘন 'সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮' এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো সরকারি কর্মচারী এ বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আসবেন। সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা-বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।