কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে কার্যকর নয় মাউথওয়াশ
সম্প্রতি করোনাভাইরাস ও মাউথওয়াশ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর মাউথওয়াশের ব্যবহার ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সহায়ক এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে গবেষণাটি বর্তমান মহামারির করোনাভাইরাস সার্স-কোভ-২ সম্পর্কিত নয়, সাধারণ ঠান্ডা-কাশি সৃষ্টি করে এমন একটি করোনাভাইরাসের নমুনা দিয়ে করা হয়েছে। ফলে ঠিক কোভিড-১৯ রোধে মাউথওয়াশ কাজ করে না।
জার্নাল অব মেডিকেল ভাইরোলজিতে প্রকাশিত গবেষণাটিতে ২২৯ই নামের একটি করোনাভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। মাউথওয়াশ বর্তমান করোনাভাইরাস থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে বলা হয় গবেষণাটিতে। যদিও গবেষণাটি প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে করা হয়নি এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি সংক্রমণ রোধে মাউথওয়াশ কিভাবে কাজ করে এসম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট অ্যাঙ্গেলা রাসমুসেন বলেন, 'লিস্টারিন বা যেকোনো মাউথওয়াশ ব্যবহারের বিরোধী নই আমি। তবে এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে এমন কোনো পণ্য নয়।'
তিনি জানান, ২২৯ই ও সার্স-কোভ-২ দুটি ভাইরাসের মধ্যে কিছু মিল থাকায় কিছু নির্দিষ্ট গবেষণায় ২২৯ই ভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে একটি আরেকটির পরিপূরক নয়।
গবেষকরা বিভিন্ন মাউথওয়াশের ভাইরাস ধ্বংসের সক্ষমতা যাচাই করে দেখেছেন গবেষণাগারে। গবেষণার ফলাফল বলছে, ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট সময় ব্যবহারে ভাইরাসটি মানবদেহের কোষে সংক্রমণ ছড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
গবেষণাটির সাথে যুক্ত পেনিসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. ক্রেগ মেয়ের বলেন, 'এটি স্পষ্ট যে, মাউথওয়াশে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে ভাইরাসটি তার সক্ষমতা হারায়।'
তবে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, গবেষণাটি মানুষের ওপর না করায় এর কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই। মানবদেহের জটিল গঠনে কোনো কিছুর প্রভাব গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মারিসার মালিনিস জানান, মানবদেহের ওপর গবেষণা হওয়ার আগে কোনো গবেষণার ফলাফলই চূড়ান্ত নয়। ইতোপূর্বেই এধরণের গবেষণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই কোন ধরণের জীবাণুমুক্ত করার পণ্য অধিক কার্যকর এনিয়ে গবেষণা চলছে।
রাটগার্স ইউনিভার্সিটির ড. ভ্যালেরি ফিটহিউজ ১৯৯০ এর দশকের একটি গবেষণার উদাহরণ দিয়ে বলেন, গবেষকরা ৩০ সেকেন্ড লিস্টারিনের ব্যবহার করে একটি ফ্লু ভাইরাস স্ট্রেইনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম হন। তবে প্রায়োগিক চিকিৎসায় গবেষণাটি কখনোই প্রাসঙ্গিক ছিলনা। এধরণের পণ্য যত ভালোভাবেই ব্যবহার করা হোক, যথেষ্ট পরিমাণে ভাইরাস তারপরও অবশিষ্ট থাকে।
করোনাভাইরাস শুধু নাক ও গলার কোষেই সংক্রমণ ঘটায় এমন নয়, দেহের ভেতরে প্রবেশ করার পর মাউথওয়াশ পৌঁছাতে পারেনা এমন স্থানেও সংক্রমণ ঘটায়।
ড. রাসমুসেন জানান, দেহে প্রবেশের পর ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হয়। কোনো কোষে সংক্রমণের পরই ভাইরাসের কাজ শেষ হয়না। গবেষণাটির সাথে যুক্ত ড.মেয়েরও এই সীমাবদ্ধতার কথা জানান।
তিনি জানান, মাউথওয়াশ ব্যবহারের পরও, ঠিক কখন ভাইরাস দেহে প্রবেশ করবে তা জানার উপায় নেই। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পর এটি স্বাস্থ্যবিধির একটি নতুন সংযোজন হতে পারে মাত্র।
তবে ড. রাসমুসেন জানান, মহামারির সময় সুরক্ষার ভুল ধারণা বিপদ ডেকে আনত্যে পারে। তিনি বলেন, ' জিনজিভাইটিস থেকে সুরক্ষার জন্য মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যায়। তবে , ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই বলেই মনে করি।'