সহজ সঞ্চয়ে সমৃদ্ধ জীবন: বিকাশ অ্যাপ দিয়ে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস খোলা যাচ্ছে মুহূর্তেই
সঞ্চয় ব্যক্তির আর্থিক সমৃদ্ধির সূচক। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সক্ষমতার অন্যতম অনুঘটক ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিত আমানত। ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, "যেকোনো দেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি সঞ্চয়। যত বেশি সঞ্চয় হবে, ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ব্যবসায় তত বেশি অর্থের জোগান দিতে পারবে। বিনিয়োগ যে শুধু বিদেশ থেকে আসবে তা নয়, দেশীয় বিনিয়োগ আমাদের নিজেদের সঞ্চয় থেকেই হতে হবে।"
খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রচলিত অনেক সঞ্চয় স্কিম সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয় ও গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারী মানুষের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই দেশের বৃহত্তম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ সবার কাছে সঞ্চয় সেবাকে পৌঁছে দিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
বিকাশ অ্যাপ থেকেই চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক ও সাপ্তাহিক সঞ্চয় স্কিম খোলার সেবা চালু হয়েছে। সঞ্চয়ের এই সহজলভ্যতার কারণে মাত্র তিন বছর আগে চালু হওয়ার পর ৩৩ লাখের বেশি ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খুলেছেন গ্রাহকেরা। এক জরিপে দেখা গেছে, এরই মধ্যে যে সকল গ্রাহকদের ডিপিএস মেয়াদপূর্ণ হয়ে গিয়েছে তাদের ৯৬ শতাংশই আবার বিকাশ-এর মাধ্যমে ডিপিএস খোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বিকাশ-এর মাধ্যমে ডিপিএস: সঞ্চয়ের নতুন সংজ্ঞা
আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিপিএস সেবা চালু করে বিকাশ। নিম্ন-আয়ের এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ বিস্তৃত জনসংখ্যাকে সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করে দিতে বিকাশ অ্যাপ দিয়ে ন্যূনতম ২৫০ টাকা থেকে সঞ্চয় চালু করা হয়। যুক্ত হয় মাসিক ও সাপ্তাহিক কিস্তিতে টাকা জমানোর সুবিধাও।
প্রচলিত সঞ্চয় স্কিমের বাইরে যে সকল গ্রাহক শরিয়াহ-ভিত্তিক সঞ্চয়ে আগ্রহী, তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিকাশ অ্যাপে ইসলামিক ডিপিএসও চালু করা হয়।
কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে গ্রাহকেরা অ্যাপ থেকেই প্রতিষ্ঠানভেদে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে বা মাসে জমাতে পারেন। আবার, ডিপিএস-এর মেয়াদপূর্তি হয়ে গেলে মুনাফাসহ পুরো টাকা গ্রাহক কোন খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করতে পারেন।
ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রভাব
অ্যাপ থেকে খুব সহজে ডিপিএস খুলতে পারার সুবিধা লাখো বাংলাদেশির ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন এনেছে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় অল্প অল্প করে টাকা জমানোর আদর্শ মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিকাশ অ্যাপ থেকে ডিপিএস খোলার সুবিধা। গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা যায়, ভবিষ্যতের জরুরি প্রয়োজন, শিক্ষার খরচ জোগানো, স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় খরচ, বিবাহের খরচসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে সপ্তাহে বা মাসে মাসে টাকা জমিয়েছেন তারা।
পরিবারের স্বপ্ন পূরণে ডিপিএস-এ জমানো অর্থ কাজে লাগিয়েছেন, এমন অসংখ্য ঘটনার কথা জানিয়েছেন সুবিধাভোগীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মো. ইয়াছিন-এর পরিবারে স্বপ্ন ছিল তার ছোটো ভাইকে বিদেশে পাঠানোর। ইয়াছিন ডিপিএস-এর টাকা দিয়ে ভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আহমেদ হোসেন আনাস তার জমানো টাকা মায়ের হাতে তুলে দেন। বাবা-মায়ের জমি কেনার উদ্যোগে নিজের জমানো টাকা দিতে পেরে আনন্দিত তিনি। এখন কেনা জমিতে বাবা-মা যেন তাদের স্বপ্নের বাড়ি তুলতে পারেন সেই স্বপ্ন তার।
ছোট ব্যবসার পুঁজির জোগানও হয়েছে এ ডিপিএস থেকে। গোপালগঞ্জে কাদের হাওলাদারের কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের ছোট্ট দোকান। ডিপিএস-এ জমানো টাকা দিয়ে দোকানে নতুন করে মাল তুলেছেন কাদের। অল্প অল্প করে জমানো টাকাটা হয়ে উঠেছে তার ব্যবসার পুঁজি। ব্যবসায় এই পুঁজির জোগানে আয় বাড়াবে বলেই তার বিশ্বাস।
নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকার রেখেছে বিকাশ-এর ডিপিএস সুবিধা। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিপিএস করা গ্রাহকদের ৩০ শতাংশই নারী। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য এই পরিসংখ্যান যেমন আশাব্যাঞ্জক, তেমন নারীর ব্যক্তিগত সমৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকার আদাবর নিবাসী গৃহিণী সৈয়দা আয়শা আখতার জানান, বছরের শুরুতে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য একটা খরচ লাগে। তিনি বিকাশ অ্যাপ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছেন সন্তানদের লেখাপড়ার জন্যই। আয়শা আক্তারের মত বহু নারী এখন সহজে টাকা জমাতে ডিপিএস করছেন বিকাশ অ্যাপ থেকে।
দেশের তৈরি পোশাক খাতে ১০ লাখের বেশি শ্রমিক বেতন গ্রহণ করেন নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টে। এই শ্রমিকদের একটি বড় অংশই নারী। বিকাশ অ্যাকাউন্টে সরাসরি বেতন পাওয়া এই নারীরা বিকাশ-এর অন্যান্য সেবা ব্যবহারের পাশাপাশি ডিপিএসের মতো সেবাও গ্রহণ করছেন যা তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সুসংহত করতে সহায়তা করছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান
ডিপিএসের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত তহবিল অংশীদার ব্যাংকগুলো কৃষি, উত্পাদন এবং অবকাঠামোর মতো বিভিন্ন খাতে অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়। অর্থের এই প্রবাহ অর্থনৈতিক কার্যকলাপে গতি এনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, যা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকে বিনিয়োগ বিদেশি বিনিয়োগের উপর নির্ভরতা হ্রাস করে।
সঞ্চয় প্রবণতায় নতুন উৎসাহ
সঞ্চয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশ-এর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস-কে সবার জন্য সহজলভ্য এবং সুবিধাজনক করে তোলায় তা গ্রাহকদের আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে। বিকাশ অ্যাপে ডিপিএস খোলা গ্রাহকদের অন্তত ৪৮ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম। এটি প্রমাণ করে যে প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের মাঝে সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তুললে ভূমিকা রাখছে এই উদ্ভাবনী সেবা।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নেওয়া
বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ, বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারীরা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে ছিল। বিকাশ-এর ডিপিএসের মতো সেবা কোটি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে ব্যাংকিং এর প্রথাগত ধারণাকে বদলে দিয়েছে। বর্তমানে, বগুড়ার কৃষক হোক বা গাজীপুরের একজন গার্মেন্টস কর্মী, যে কেউ এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিপিএসের পাশাপাশি আরও বহু আর্থিক সেবা নিতে পারছেন একদম সহজে।
পারস্পরিক সহযোগিতা ও উদ্ভাবন
বিকাশ-এর ডিপিএস সেবার সাফল্যের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সমর্থন এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "কোলাবোরেশন, কো-ক্রিয়েশন ছাড়া ভবিষ্যৎ অচল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের পক্ষে একা পৌঁছানো ব্যয়সাপেক্ষ। এমএফএস এই ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে। আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখছে এই ধরনের পার্টনারশিপগুলো।"
ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অবদান
প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করে কীভাবে গ্রাহকের আস্থা আরো বেশি বাড়ানো যায় এবং গ্রাহকের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরো সমৃদ্ধ করা যায় তার বড় উদাহরণ বিকাশ অ্যাপে ব্যাংকের শরীয়াহ-ভিত্তিক ডিপিএস খোলার সুযোগ।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, "বিকাশ বাংলাদেশে ব্যাংকিংয়ের ধারণা বদলে দিয়েছে। সিটি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার মতো বিকাশ অ্যাপে সিটি ব্যাংকের যে ইসলামিক সেভিংস আছে তা শরিয়াহ্ উপদেষ্টা বোর্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে শরিয়াহ্-ভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাহকদের জন্য আনা হয়েছে।"
অংশীদারিত্বের গুরুত্ব
ব্যাংক-এমএফএস অংশীদারিত্ব দেশের আর্থিক খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে যাওয়া এখন আর কঠিন কোনো কাজ নয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিকাশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, "সমৃদ্ধি শুরু হয় সঞ্চয় থেকে। যেদিন প্রথম এক টাকা সঞ্চিত হয়, সেদিনই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুরু হয়। বিকাশ অ্যাপে সেভিংস-এর সৌন্দর্যই এখানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি সহায়তা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সঙ্গে অংশীজন হিসেবে যে ব্যাংকগুলো কাজ করছে তাদের অবকাঠামো ছাড়া বিকাশ-এর পক্ষে আজকের অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।"