রিফাত হত্যা মামলা: অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা কাল
আগামীকাল মঙ্গলবার বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা করা হবে। বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমানের এ রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
সারা দেশের কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন নিহত রিফাতের পরিবারসহ বরগুনার সচেতনমহল।
অপরদিকে, আসামিপক্ষের প্রত্যাশা- ন্যায়বিচার পাবেন তারা।
এর আগে, নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও আদালতসূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মাত্র ৬৩ কার্যদিবসে ৭৪ জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ অক্টোবর বরগুনা শিশু আদালত এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন।
মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৭ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এ রায় ঘিরে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জানান, 'প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক যে রায় দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এবারের রায়েও প্রকৃত অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে এবং নির্দোষ যারা রয়েছে তারা খালাস পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'
বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, 'এ মামলায় মোট ৭৫ জন সাক্ষির মধ্যে ৭৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি তাতে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।'
১৪ কিশোর আসামির মধ্যে একজনের আইনজীবী মোসা. নারর্গিস পারভীন সুরমা বলেন, 'আমার মক্কেলকে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোথাও তার সম্পৃক্ততার পাওয়া যায়নি। তাই আশা করছি, আমার মক্কেল বেকসুর খালাস পাবে।'
আসামি পক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, 'আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি।' একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান।
রিফাত হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলো, মোঃ রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মোঃ রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মোঃ আবু আবদুল্লাহ্ ওরফে রায়হান (১৬), মোঃ ওলিউল্লাহ্ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), মোঃ নাইম (১৭), মোঃ তানভীর হোসেন (১৭), মোঃ নাজমুল হাসান (১৪), মোঃ রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মোঃ সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল শিকদার জয় (১৬) এবং মোঃ আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুুবরণ করেন রিফাত শরীফ।
ঘটনার পরের দিন ২৭ জুন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। পরে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক।
একইসঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।