পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক ৯% মজুরি বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি
দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ৫ জানুয়ারি জারি করা এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গঠিত 'ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট' কমিটির সুপারিশের আলোকে সরকার পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বিদ্যমান শতকরা ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে আরও শতকরা ৪ শতাংশ যুক্ত করে মোট শতকরা ৯ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।
তবে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ শতকরা ৫ শতাংশ বিদ্যমান অবস্থায় অব্যাহত থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কমিটির সুপারিশ করা বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট শতকরা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি ১ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে । চলতি জানুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে এই বাড়তি মজুরি পরিশোধ করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত) সম্পর্কিত অন্য সুবিধাদিও প্রাসঙ্গিক হবে।
এতে আরও জানানো হয়েছে, সরকারের পুনর্মূল্যায়ন বা ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের পরবর্তী ন্যূনতম মজুরি হার ঘোষণা না করা পর্যন্ত এই মজুরি বৃদ্ধি চলতে থাকবে।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, সরকার বা ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পরবর্তী নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগ পর্যন্ত এই বাড়তি মজুরি পেতে থাকবেন শ্রমিকরা।
তিনি আরও বলেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ শতকরা ৫ শতাংশ বিদ্যমান অবস্থায় অব্যাহত থাকবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ডিসেম্বর মাসে যাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট হওয়ার কথা তারা ৯ শতাংশ বাড়তি মজুরি পাবেন। আর যাদের ডিসেম্বরে ইনক্রিমেন্ট হওয়ার কথা নয়, তারা ৫ শতাংশ বাড়তি মজুরি পাবেন।
এর আগে ন্যূনতম মজুরি সংশোধন ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সংক্রান্ত ক্যাপাসিটি অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির পঞ্চম সভায় তৈরি পোশাক খাতের জন্য বার্ষিক ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ওপর জোর দিয়ে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
প্রতিক্রিয়ায় মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারের কথা জানিয়ে মজুরি ৮% বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে এতে সই করেন- জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম; বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবির আহম্মেদ
মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে সই করেন- বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এ এন এম সাইফুদ্দিন ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহাম্মাদ।
সরকারের পক্ষে সই করেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এমাদুর হক, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. হাসিবুজ্জামান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সিকদার।
এদিকে, তৈরি পোশাক খাতের নির্মাতারা বলেছেন, এই ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি কার্যকর করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
তাদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও আয় তেমন বাড়েনি। তবে, যেহেতু এটি একটি ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত, তাই তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য।তারা সরকারকে এই চাপ সামলাতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।