প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ কমাতে পারে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি
যুক্তরাজ্যে পরিচালিত একটি বড় পরিসরের গবেষণায় উঠে এসেছে, দৈনিক এক গ্লাস দুধের সমপরিমাণ ক্যালসিয়াম খাদ্যতালিকায় রাখলে পাকস্থলীর, অর্থাৎ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
গবেষকরা ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে ৫ লাখেরও বেশি নারীর খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, গাঢ় সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজি, পাউরুটি এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ নন-ডেইরি দুধও ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার কারণে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।
এ গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা ১২ হাজারেরও বেশি নারী অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের খাদ্যতালিকার প্রায় ১০০টি উপাদান বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জ্যানেট কেড বলেন, 'গবেষণাটিতে দেখা গেছে, সার্বিক খাদ্যাভ্যাস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে।'
ক্যান্সার দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং ধূমপান ছাড়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে-র ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, দুগ্ধজাত খাদ্য 'সম্ভবত' কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন বাড়তি ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, অর্থাৎ বড় এক গ্লাস দুধ খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কমে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ড. কেরেন পেপিয়ার বলেন, 'এই গবেষণায় কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে দুগ্ধজাত খাদ্যের, বিশেষত ক্যালসিয়ামের ইতিবাচক ভূমিকা উঠে এসেছে।'
সকালের নাস্তায় সিরিয়াল, ফলমূল, দানাদার শস্য, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও ভিটামিন সি-ও অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি সামান্য হলেও কমায়।
নতুন এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রতিদিন বড় এক গ্লাস ওয়াইন (২০ গ্রাম অ্যালকোহল) কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স (একটি হ্যামের টুকরোর সমান) প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলেও ঝুঁকি ৮ শতাংশ বাড়ে।
ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা তো জানা তথ্যই। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, এটি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও ভূমিকা রাখে।
দুধ, দই ও পনিরে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। দুগ্ধজাত খাদ্যের বাইরে সয়া ও রাইস ড্রিঙ্ক, হোয়াইট ব্রেড, বাদাম, বীজ, ল্যাকটোজমুক্ত দুধ থেকেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণত প্রবীণদের পাকস্থলীর ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
তবে ৫০ বছরের কম বয়সি তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও এই ক্যান্সারের হার বাড়ছে, যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং স্থূলতাজনিত সমস্যা এর অন্যতম কারণ হতে পারে।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
- মল ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন মল নরম হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন মল ত্যাগ, বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
- মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত বা মলে রক্ত পাওয়া।
- কোনো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
- অকারণ ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট।