লকডাউনের বিরুদ্ধে স্পেন ও ইতালিতে বিক্ষোভ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ
ইউরোপজুরে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। মহাদেশটির নানা দেশের সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফা লকডাউন চালু করার কথাও ভাবছে। এরই প্রতিবাদে গত সোমবার রাতে ইতালি ও স্পেনে হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে।
বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করে খুব দ্রুতই। প্রথমদফা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল উত্তর ইতালি। সোমবার রাতে ওই অঞ্চলের প্রধান প্রধান শহর; মিলান ও তুরিনে বিশাল সংখ্যক মানুষ চলাচলের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া লকডাউন বিধিমালার প্রতিবাদ করেছে।
সুযোগ সন্ধানী লুটতরাজকারিরাও ছিল তৎপর। তুরিনে লুঠ হয়েছে গুচি-সহ বেশ কিছু বিলাসপণ্যের ব্র্যান্ড শোরুম। শহরটিতে রাতের অন্ধকার নামা মাত্র তরুণ জনতার ভিড় রাস্তায় নেমে আসে এবং বড় আকারের বাজির বিস্ফোরণ ঘটায়। জ্বালিয়েছে নানা রঙের ফ্লেয়ার।
সহিংস বিক্ষোভের তীব্র নিন্দা করেছেন শহরটির মেয়র। তিনি অর্থনৈতিকভাবে মন্দার মুখে থাকা পানশালা ও রেস্তোরা মালিকরা এর ফলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে নিন্দা করেছেন।
লোমবার্ডি প্রদেশের রাজধানী মিলানে পুলিশকে লক্ষ্য করে মলোটভ ককটেল বা অগ্নিবোমা ছোঁড়া হয়। পরবর্তীতে ২৮জনকে আটক করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, ইতালি তথা ইউরোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের উষ্ণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এ অঞ্চলটি। আর এখন নতুন করে আবার ইতালিতে ভাইরাসের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
লকডাউনের আশঙ্কায় বিক্ষোভ হয়েছে স্পেনেও। বার্সেলোনায় ময়লার ঝুড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে দাঙ্গা পুলিশের হস্তক্ষেপে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আসে।
কেনারি দ্বীপপুঞ্জ বাদে সারা দেশজুড়ে দ্বিতীয় বারের ন্যায় জরুরি অবস্থা জারির একদিন পরই স্পেনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নতুন করে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রাথমিকভাবে ১৫ দিন কার্যকর থাকবে। তবে দেশটির সরকার এ মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত বাড়াতে পার্লামেন্টের কাছে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে। আইনপ্রণেতাদের অনুমোদন পেলে রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফ্যিউ জারির এ পদক্ষেপ ২০২১ সালের মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
স্পেনের কাতালুনিয়া রাজ্যের কর্তৃপক্ষ জীবাণুর বিস্তার রোধে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লকডাউন চালুর কথা ভাবছে।
এসব কিছুর প্রেক্ষিতে বার্সেলোনার সড়কে বিশাল জনস্রোত নেমে আসে। কোভিড নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপকে পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে তুলনা করে এর বিপক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের সিংহভাগই অবশ্য মাস্ক পরেছিল। বিক্ষোভ থেকে তারা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সুস্পষ্ট এবং কার্যকর নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
বিক্ষোভে অবশ্য কোভিড অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর সদস্যরাও অংশ নেয়। আরও ছিল কাতালান অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীরা। পাশাপাশি ট্রটস্কিবাদী এবং পুঁজিবাদ বিরোধীরাও যোগ দেয়। তারা দেওয়ালে দেওয়ালে 'ধনীদের ঘরে বন্ধ করে রাখ' এমন স্লোগান লিখেছে।
তবে শেষমেষ এসব র্যালী ছত্রভঙ্গ করে দিতে সক্ষম হয় দাঙ্গা পুলিশ।
ইতালি এবং স্পেন দুই দেশেই লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্পেনের জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ফার্নান্ডো সিমন জানান, সংক্রমণের কারণে কিছু হাসপাতালে ইতোমধ্যেই খুব জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
''চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে কিনা- তা আমার জানা নেই। তবে সরকারি বিধি-নিষেধ জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর হওয়া দরকার। কেবল মাত্র তাহলেই আমরা স্বাস্থ্যখাতে বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হব।''
রাজধানী মাদ্রিদ এবং এর আশেপাশের কিছু এলাকার হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যা এখন ৪০ শতাংশ কোভিড রোগী দিয়ে ভর্তি। আর সমগ্র স্পেনে এই হার ২৪ শতাংশ। লকডাউন নিয়ে সরকারের ভাবনা-চিন্তা তাই অমূলক নয়।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নানা অঞ্চলের প্রশাসনের দ্বিমত- সার্বিকভাবে চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত করছে। গত সপ্তাহেই প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ১০ লাখ সংক্রমণ ছাড়িয়ে যাওয়া রেকর্ড হয় স্পেনে। রোগটিতে মারা গেছেন প্রায় ৩৫ হাজার জন।
আর চলতি সপ্তাহন্তে একদিনে ৫২,১৮৮টি সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়।
- সূত্র: ডেইলি মেইল