মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে যেভাবে ঐতিহাসিক গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত হয়
আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু, বিবদমান দুই পক্ষকে এ চুক্তিতে রাজি করানোর প্রক্রিয়াটি ছিল দীর্ঘ ও অনিশ্চিত। এরপরেও কাতারের রাজধানী দোহায় টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষপর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে ইসরায়েল ও হামাস। সেজন্য বড় অবদানটা ছিল মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর। খবর বিবিসির
কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা এ যুদ্ধবিরতির জন্য নেপথ্যে কাজ করেছেন। ১৫ মাস ধরে গাজায় লড়াই চলেছে, এর মধ্যে অনেক মাস ধরেই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য তারা চেষ্টা করছিলেন। তবে দোহায় শেষ মুহূর্তের আলোচনা ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। এ সময় সব আলোচক, মধ্যস্থতাকারী ও অংশীজনরা দোহার একটি ভবনেই অবস্থান করছিলেন। চুক্তিতে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা সম্মতি প্রদানের ১০ মিনিট আগেও চলেছে দর কষাকষি।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, এর আগেও যুদ্ধবিরতি চুক্তি একদম শেষ পর্যায়ে এসে ভেস্তে যাওয়ার নজির আছে। তাই এবার শেষ মুহূর্তের বিবাদের কারণে শান্তি প্রক্রিয়া যেন বানচাল না হয়ে যায়— সেজন্য একদিকে যখন ব্যাপক চেষ্টা করা হচ্ছিল, অন্যদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী যে মঞ্চে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবেন– সেটি স্থাপনের কাজ চলছিল।
আলোচনার বিষয়ে অবহিত ওই কর্মকর্তা জানান, 'আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে, এভাবেই শেষ মিনিটগুলোয় সবকিছুকে জোড়াতালি দেওয়া হয়।'
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া সব পক্ষের বেশকিছু কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেছে বিবিসি।
তারা জানান, হামাস ও ইসরায়েলের আলোচকরা একই ভবনে অবস্থান করলেও— তারা একে-অপরের সাথে দেখা করেনি, বা সরাসরি সংলাপে অংশ নেয়নি। তাদের মধ্যে সংযোগের কাজটা করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। গত মাসেই সিদ্ধান্ত নেয় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের কাছাকাছি বসিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য দোহার দ্বিতল একটি ভবনে তাদের আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ওই ভবনের প্রথম তলায় ছিল হামাসের প্রতিনিধি দল, আর ওপরের তলায় ইসরায়েলিরা। উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আদান-প্রদানের কাজ করেছেন মধ্যস্থতাকারী ও কর্মকর্তারা। এসব নথির মধ্যে ছিল, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্র, বন্দিদের মুক্তি প্রদানের বিস্তারিত তথ্য ইত্যাদি। নথিগুলোয় এক পক্ষের মত নিয়ে অন্য পক্ষের কাছে ছোটাছুটি করতে হয় কর্মকর্তাদের।
মার্কিন ওই কর্মকর্তার মতে, 'এ কারণে কাজের চাপ ছিল ব্যাংক, আমি তো বলব, শেষ মুহূর্তের আগে কোনোকিছুই চূড়ান্ত করা যায়নি।'
সময়ের অভাবও আরেকটি বড় সমস্যা ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলা ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনি ক্ষমতা গ্রহণের আগেই গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া দেখতে চেয়েছিলেন। তার এই লক্ষ্যই উভয়পক্ষকে বাধ্য করে শেষ সময়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে।
ওই ভবনের মধ্যে কাতার ও মিশর সরকারের জেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে পৃথকভাবে বসে আলোচনা করে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধি দল। এই সংলাপে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিল আবদুল রাহমান আল-থানি। চুক্তির খুঁটিনাটি নির্ধারণেও তিনি ভূমিকা রাখেন।
চুক্তিটির রূপরেখা অবশ্য হঠাৎ করে আসেনি, বরং কীভাবে এটি বাস্তবায়িত হবে — তা আগের পরিকল্পনাগুলোর পথ ধরেই এগিয়েছে।
যেমন, গত ১৫ জানুয়ারিতেই চুক্তির একটি সার্বিক কাঠামো নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছিল। এর আগে গত বছরের মে মাসে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেরকম চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন— এটি অনেকটা তারই আদলে করা হয়েছে। অর্থাৎ, মোট তিন ধাপে চুক্তির বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে আলোচনা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই সময় পালে হাওয়া পায়নি যুদ্ধবিরতির চুক্তি, কারণ বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন চাপ দেওয়া হয়নি। কিন্তু, ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরে — গত ডিসেম্বর থেকেই সে অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে সংলাপের গতি নতুন মাত্রা লাভ করে।