ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বান রেল উপদেষ্টার
দাবি পূরণে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, "দাবিগুলো স্পষ্ট, কিন্তু ট্রেন বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করা দুঃখজনক।"
তিনি বলেন, "আলোচনার জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে। তাদের অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়েছে, বাকিগুলোও পূরণ করা হবে। রেল পরিষেবা বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই আমি অনুরোধ জানাচ্ছি, ধর্মঘট বন্ধ করে আলোচনায় বসুন।"
ফাওজুল কবির আরও বলেন, "এককভাবে বিষয়টি সমাধানের এখতিয়ার রেল মন্ত্রণালয়ের নেই। বিষয়টি অর্থ বিভাগের, আলোচনা চলছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, শিগগিরই একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে।"
"আমরা তাদের বার বার আলোচনার জন্য ডেকেছি। আমাদের অফিসাররা তাদের কাছে গিয়েছেন, আলোচনা আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তারা আসছেন না। আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করতে চাই। তবে তারা যদি যাত্রী হয়রানি করেন, সরকারকে বাধ্য করেন, তাহলে সরকারকে কঠোর হতেই হবে," যোগ করেন তিনি।
যাত্রীদের সুবিধার্থে বিআরটিসি বাস দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অনেক যাত্রীদের জরুরিভিত্তিতে যেতে হবে, তারা ব্যাগ নিয়ে চলে এসেছেন। তাদের সুবিধার্থে আমরা স্টেশনে বিআরটিসি-র বাস দিয়েছি। ট্রেনের একই ভাড়ায়, তারা যে গন্তব্যের টিকিট কেটেছেন, সেই গন্তব্য পর্যন্ত যেতে পারবেন এই বাসে করে। ট্রেনের যে রুট আছে, বাসগুলো ঠিক একই রুটে যাবে। তাই যার যেটা গন্তব্য, তিনি সেখানে নামতে পারবেন।"
গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া রেল ধর্মঘটে দেশব্যাপী ট্রেন চলাচল অচল হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক অদ্ভুত নীরবতার দৃশ্য দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারগুলোতেও ছিল অন্যরকম নিস্তব্ধতা।
তবে অনেক যাত্রীই ধর্মঘটের বিষয়টি জানতেন না। তারা স্টেশনে এসে পৌঁছানোর পর ট্রেন চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানতে পারেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী ও কক্সবাজারের মতো বিভিন্ন গন্তব্যে বেড়াতে যাওয়া যাত্রীরা শীতের সকালে হঠাৎ করেই আটকা পড়েন।
বয়স্ক বাবা ও সন্তানকে নিয়ে জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন খুরশিদ আক্তার নামের একজন নারী। আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন তিনি। ফলে আজ ভোরে শনির আখড়ার বাসা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। এসে জানতে পারেন ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা অপেক্ষা করে অবশেষে তিনি ফিরে যান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খুরশিদ আক্তার বলেন, "শনির আখড়া থেকে বৃদ্ধ বাবা এবং বাচ্চা নিয়ে এত দূরে আসলাম। এখন শুনি ট্রেন চলছে না।"
"বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে বাসে যাওয়া কঠিন। এতক্ষণ অপেক্ষা করলাম, ট্রেন আজকে চলার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। মাইকে বারবার টিকিট ফেরত নেওয়ার কথা ঘোষণা করছে। এখন টিকিট ফেরত দিয়ে চলে যাব," যোগ করেন তিনি।