নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ চাঁদাবাজি, মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, চাঁদাবাজি ও মজুতদারি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এত বেশি।
তিনি বলেন, এছাড়াও নিম্নমানের সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা এবং সামগ্রিকভাবে সরবরাহকে ব্যাহত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়াও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সংস্থাটির কার্যালয়ে সিপিডি আয়োজিত 'সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ'- শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে 'বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫ প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা'- শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল, সৈয়দ ইউসুফ সাদাতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'অন্তর্র্বতী সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা চাই, সরকার ঘোষিত রোডম্যাপের মধ্যেই নির্বাচন হোক।'
তিনি বলেন, 'যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার যৌক্তিকতা নেই।'
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া দেশে অর্থবহ অর্থনৈতিক সংস্কার সম্ভব হবে না।'
সবাই সংস্কারের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের ওপর।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে।'
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'দেশে বিনিয়োগ কমছে এবং বেকারত্ব বাড়ছে। অনিশ্চয়তা, আস্থার অভাব এবং ভোক্তা চাহিদা হ্রাস এই প্রবণতার মূল কারণ।'
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম, অন্যদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগও কম। এ অবস্থায় সরকারি বিনিয়োগ আরও কমে গেলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'কর জিডিপির হার অনেক কম, এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব না বাড়ায় দেশ বাধ্যতামূলকভাবে ঋণ নির্ভর হচ্ছে। এডিবি পুরো ঋণ নির্ভর। এতে বৈদেশিক ঋণের চাপও বাড়ছে।'
তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। এতে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের মান কমে যাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেটি হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক সংস্কার দুটোই সমান্তরালভাবে চলতে হবে। পার্টির ভেতরে সংস্কার লাগবে, গণতান্ত্রয়ণ লাগবে। শুধু ইলেকটোরাল সংস্কার দিয়ে সম্ভব না। তবে দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যাওয়ার আগে একটি সমঝোতায় যদি আসা সম্ভব হয় যে, সংস্কারগুলো পরবর্তীতেও চালিয়ে নেওয়া হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
সরকারের আয়-ব্যয়
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'অর্থবছরের শুরুতে আন্দোলনের কারণে অর্থনীতিতে ধাক্কা এসেছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭%। আগের বছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭%। রাজস্ব আয়ে ব্যাপক অবনতি হয়েছে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী কয়েক মাসে ৪৫% হারে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে। যা বাস্তবসম্মত নয়।'
তিনি বলেন, 'আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সরকার মূসক ও সম্পূরক শুল্ক থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষকে প্রভাবিত হচ্ছে। উচ্চমূল্যস্ফীতির মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, প্রশাসনিক পরিবর্তন, প্রকল্প পুনঃর্মূল্যায়নের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সরকারের ব্যয় কমেছে। তবে এডিপির বাইরে বাজেট বাস্তবায়ন ঊর্ধ্বমুখী।'
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এতে আগামীতে সুদ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে।'
তিনি বলেন, 'দেশের অর্থনীতি যে অবস্থায় রয়েছে সেখানে সংস্কারের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সংস্কার দরকার তবে এরসঙ্গে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাও জরুরি। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। জনগণের অর্থের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।'
মূল্যস্ফীতি কমাতে সরবরাহ শৃঙ্খলে চ্যালেঞ্জ
এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'অনেকদিন ধরেই মূল্যস্ফীতির হার ১০% রয়েছে। শহর থেকে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি, যা উদ্বেগজনক বিষয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু প্রচলিত পদক্ষেপ নিলেও খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহে শৃঙ্খলা আনা এবং সুশাসনের দিকে মনোযোগ দেয়নি। ফলে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম এখনও উচ্চপর্যায়ে রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও কৃষি পণ্যের মজুতদারির কারণে খাদ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া গত জুনে দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যাও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ।'
তিনি আরও বলেন, 'চাল, গরুর মাংস, সয়াবিন তেল, চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। এছাড়া পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন ও পাম তেলসহ ১৪টি পণ্যের দামের দামের ওঠানামায় বেশিকিছু বাধা ও অদক্ষতা রয়েছে।'
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- মজুদদারি, গুদাম পরিচালনাকারিদের প্রভাব, উচ্চ উপকরণ খরচ, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা, নিম্নমানের সংরক্ষণ ও পরিবহণ ব্যবস্থা এবং সামগ্রিকভাবে সরবরাহকে ব্যহত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।'
তিনি বলেন, 'চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য এজেন্ট রয়েছে। এদের মধ্যে গুদাম মালিক ও অটো রাইস মিলারদের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। রুই মাছের দামে বাড়ে মধ্যস্থতাকারী ও অনিয়ন্ত্রিত নিলাম ব্যবস্থার কারণে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুঃখের বিষয় হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি, মজুদদারি ও অনিয়ন্ত্রীত মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় মধ্যস্থতাকারীদের জটিল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।'
বিনিয়োগে মন্দা কাল চলছে এবং বেকারত্ব বাড়ছে
সিপিডি বলছে, 'অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে বেসরকারি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতির মন্দা কাল যাচ্ছে। যদিও সরকার বেশকিছু ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব কর্মসূচি নিয়েছে। তবে সেই উদ্যোগগুলো বিনিয়োগ কমে যাওয়া রুখতে পারবে কি-না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।'
ফাহমিদা বলেন, 'বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবাহ, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি নিম্নমুখী। অনিশ্চয়তা, কনফিডেন্সের অভাব থাকলে বিনিয়োগ হয় না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি, ঘুষ এসব রয়েছে। ভোক্তা চাহিদা কমেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সুদহার বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ।'
তিনি বলেন, 'ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। সেটা একটা চিন্তার বিষয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেকারত্ব পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।'
বিবিএসের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের বেকারত্বের হার ছিলো ৪.০৭%। ২০২৪ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৪.৪৯%।'
ফাহমিদা বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরুর দিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়লেও এখন নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সূচক কমেছে। নেট পোর্টফলিও বিনিয়োগ বাড়লেও শেয়ারের দামে পরিবর্তন বিশেষ হয়নি। চলতি অর্থবছরের শুরুর মাসগুলোতে পোর্টফলিও বিনিয়োগ ৬ থেকে ৯ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল, যা আগের তুলনায় কম। এটি বিনিয়োগকারিদের আস্থাহীনতার ইঙ্গিত বহণ করে।'
তিনি বলেন, 'বিনিয়োগের মতো শিল্পের উৎপাদন পরিস্থিতি মন্দার আভাস দিচ্ছে। বড় শিল্পে উৎপাদনে পতন লক্ষ্য করা গেছে। বড় বড় কারখানা বেক্সিমকো, কেয়াসহ অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।'
ব্যবসার চ্যালেঞ্জ
সিপিডি বলেছে, 'আগে থেকেই বাংলাদেশের ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ ছিল। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে এবং আগের চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও তীব্র করেছে।'
ফাহমিদা খাতুন দুর্নীতি, উচ্চ করহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সড়ক অবরোধ, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, বাড়তি সুদহার, বেকারত্ব বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও প্রাপ্যতায় ঘাটতিসহ ২৪টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দীর্ঘমেয়াদে একটি বিনিময় হার নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ বেশকিছু বিষয়ে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন।
ধান ও গম খাত নিম্ন উৎপাদন ও উচ্চ ব্যয়ের বৃত্তে
সিপিডি বলেছে, 'ধান ও গম নিম্ন উৎপাদন এবং উচ্চ ব্যয়ে আটকে গেছে। আমন উৎপাদন কমেছে। এতে চালের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। চাহিদা বৃদ্ধিও চালের ঘাটতির আরেকটি কারণ। চালের ব্যবহার হচ্ছে শিল্পের কাঁচামাল, প্রাণী খাদ্যে। এজন্য চালের বাজারে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ছে।'
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'খাদ্য দ্রব্যের চাহিদার সঠিক প্রক্ষেপণ করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমানো, ভর্তুকির যথার্থতা নির্ণয় করতে হবে। সার ও অন্যান্য খাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেটা অপচয় হচ্ছে কি-না দেখা দরকার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সরবরাহ করতে হবে।'
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দুষ্টচক্রে আবদ্ধ
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাস বা এলএনজির অংশ এখন ৪৩%। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান কম। সরকারই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে। যা আন্তর্জাতিক বাজারের দর প্রতিফলন করে না।'
তিনি বলেন, 'এ খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বর্তমান সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেখানে বাস্তবায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে। কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, কার্ক্রমে গতি ধীর। বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি ছিল, এটা গুরুত্বপূর্ণও। কারণ এসব চুক্তিতে অনেক অসম ব্যবস্থা রয়েছে।'
ব্যাংকিং খাত
সিপিডি বলছে, 'দেশের অর্থনীতির সমস্যা জর্জরিত অন্যতম প্রধান খাত ব্যাংকিং খাত। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী যে ধরনের ক্যাপিটাল রাখার কথা, তা অনেক ব্যাংকের নেই। এছাড়া, খেলাপি ঋণ সম্পদের মান ও তারল্য পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১৭%।'
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতে সম্পদ বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ জাতীয় বাজেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের চেয়ে বেশি।'
তিনি বলেন, 'দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কারণে ব্যাংক খাতের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দ্বৈতনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। এছাড়া অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইন কার্যকর বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর সঠিক তথ্যের অভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, এমনকি ইচ্ছেকৃত খেলাপিদেরও সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি পরিস্থিতি উন্নয়নে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন, মার্জার চালু করা, চুরি বা পাচার করা অর্থ ফেরাতে জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়ার সুপারিশ করেন।
পাশাপাশি সঠিক উপায়ে ঋণ মঞ্জুর, সিঙ্গেল ব্রোয়ার এক্সপোজার নিয়ম মেনে চলা, ঋণ মওকুফ না করা, ব্যাংকের বোর্ড রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করারও সুপারিশ করেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'লাইফ সাপোর্টে থাকা ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী মহলকে মোকাবিলা করে ব্যাংক খাত সংস্কার সম্ভব না। তাই ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও সুশাসন বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের সম্ভাবনা বাড়াতে হবে।'
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, চাঁদাবাজি বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের দুর্বলতা আছে।'