প্রতিবন্ধীদের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী বাংলাদেশের গণপরিবহন, মেট্রোরেল ছাড়া কোথাও নেই প্রবেশযোগ্যতা
মাত্র দুই বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে নিগার সুলতানা সুমির শরীরের নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে তিনি সম্পূর্ণভাবে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
নিগারের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলায়, সেখানেই বেড়ে ওঠা। সেখানেই তিনি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছেন। তার মা ছিলেন তার প্রেরণার উৎস। মাকে ধরেই প্রতিদিন তিনি স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেন।
ঢাকায় কিছু উচ্চমানের স্কুল ছাড়া দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য লিফট বা র্যাম্পের ব্যবস্থা নেই।
তবে নিগার লড়াই করতে জানেন। আগে তিনি শিক্ষা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতেন। এখন তিনি সংগ্রাম করছেন জীবিকার জন্য।
তিনি বর্তমানে রাজধানীতে একটি বাইং হাউজে কাজ করেন এবং নিজের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে কোনো সাহায্য ছাড়া একা বসবাস করেন।
নিগার বলেন, "মূলধারার চাকরি পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। মূল সড়কের কাছে হুইলচেয়ার ব্যবহারের উপযোগী এমন একটি বাসা খুঁজে পাওয়া আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এবং আমার মাসিক বেতনের সমান বাসা ভাড়া দেওয়া অন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ।"
তিনি বলেন, "এখন আমি অ্যাপার্টমেন্টে অন্য দুটি মেয়েকে সাবলেট দিয়েছি। তারা ভাড়া ভাগাভাগি করে নেওয়ার কারণে এখন কিছুটা সুবিধা হয়েছে।"
এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল ছাড়া দেশের অন্য কোনো গণপরিবহন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। তবে, মেট্রোরেল শুধু একটি নির্দিষ্ট রুটে চলে এবং শহরের একটি ছোট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
নিগার বলেন, "দুঃখজনকভাবে মেট্রো ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোনো ডিসকাউন্ট বা হাফ-পাস কার্ডের ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারি ভাতা মাত্র ৮৫০ টাকা। এটি অল্প কিছু মৌলিক প্রয়োজনই পূরণ করতে পারে।"
নিগার প্রতিদিন অফিস মাইক্রোবাস ধরার জন্য রিকশা ব্যবহার করেন। রিকশাচালকরা প্রায়ই তাকে হুইলচেয়ারসহ নিতে চান না। কখনও কখনও তাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, না হলে তারা হুইলচেয়ারটি ভাঁজ করে এবং পুনরায় খুলে দিতে চান না।
একই রকম গল্প জশাই সাংমার। তিনি জন্ম থেকেই অস্টিওজেনেসিস ইমপেরফেক্টা (ব্রিটল বোন ডিজিজ) রোগের কারণে চলাফেরা করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।
জশাই সাংমা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা। প্রতিদিন সকালে তিনি তার মিরপুরের বাসা থেকে কাজের জন্য যাত্রা শুরু করেন। তিনি মিরপুর স্টেশন থেকে মেট্রোতে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নামেন। তার ব্যাংক কাছেই অবস্থিত।
সৌভাগ্যবশত, জশাই-এর হুইলচেয়ারটি একটি বৈদ্যুতিক হুইলচেয়ার এবং তিনি নিজেই এটি চালাতে পারেন। তার কাজের রুটের মোটামুটি একটি ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। কিন্তু এর বাইরে তিনি চাইলেও বেশি চলাফেরা করতে পারেন না।
২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-এর ৩২ ধারা অনুযায়ী, গণপরিবহনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সহায়ক নয় এমন ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কার্যকরী নয় এমন পরিবহণ ডিজাইনের [বিশেষ করে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য] কারণে তাদের অনেকেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারেন না। এই অসুবিধা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে। এটি তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
জশাই বলেন, "পরিবহণ ব্যবস্থা আমাদের ব্যবহারযোগ্য নয়। বাসের হেলপাররা হুইলচেয়ার নিতে চায় না এবং প্রায়ই খারাপ আচরণ করে। রিকশা এবং সিএনজিতে হুইলচেয়ারের জন্য জায়গা নেই। উবার এবং পাঠাও খুবই ব্যয়বহুল। এবং কখনও কখনও সঠিক যানবাহন খুঁজে পাওয়া কঠিন।"
এছাড়াও, রাস্তাগুলো সাধারণত বাজেভাবে বানানো হয় এবং গতি কমানোর জন্য উঁচু উঁচু বাধা (স্পিডব্রেকার) ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ভরা। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য এগুলো পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ কার্যকর হওয়ার সময় সরকার জানিয়েছিল, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২.৮০ শতাংশ, পুরুষদের মধ্যে ৩.২৮ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ২.৩২ শতাংশ।
ধারণা করা হয়, ঢাকা শহরে ১০ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বসবাস করেন। তবে, সালমা মাহবুবের মতো অধিকার কর্মীরা বিশ্বাস করেন, এই সংখ্যা আরও বেশি, কারণ অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরকারি রেজিস্ট্রিতে অনথিভুক্ত থাকে।
সালমা মাহবুব বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস-এর (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক। বছরজুড়ে, বি-স্ক্যান পাবলিক বাসগুলোর প্রবেশযোগ্যতা নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন-এর (বিআরটিসি) সঙ্গে সরাসরি কাজ করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করছে।
সালমা বলেন, "এই মানুষগুলো সব জায়গায় আছেন। আপনি তাদের প্রায়ই দেখেন না, কারণ তাদের কাছে পার্টি, ইভেন্ট বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর মতো কোনো মাধ্যম নেই। দুর্ভাগ্যবশত, তারা কখনোই আমন্ত্রণ পায় না।"
সালমা মাহবুব নিজেও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের আগে তিনি পৃথিবী অনেক কম দেখেছেন এবং তার জীবন শুধু বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, "আমার গাড়ি ব্যবহারের সামর্থ্য আছে এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটির জন্য আমি বাইরে যেতে পারি, আপনারাও আমাকে দেখতে পান। তবে, আমাদের অবকাঠামো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একেবারেই সহায়ক নয়। এটি এখনও আমার জন্য অনেক কঠিন। কিন্তু অন্যদের কী হবে? তারা কীভাবে নিজেদের দৃশ্যমান করবে এবং মর্যাদার সাথে জীবিকা নির্বাহ করবে?"
বারবার একই প্রতিশ্রুতি: বাস্তবায়নহীন ঘোষণা
২০১৩ সালে ১০০ জনেরও বেশি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে প্রবেশযোগ্য গণপরিবহনের দাবি জানিয়েছিলেন। এই প্রতিবাদটি বি-স্ক্যান, ওয়াটারএইড এবং রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছিল।
তখনকার সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমাবেশে অংশ নেন এবং প্রতিবাদকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, সরকার গণপরিবহনে প্রবেশযোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে যেসব বাস আমদানি করা হবে, তার মধ্যে অন্তত একটি বাসে হুইলচেয়ার-প্রবেশযোগ্য র্যাম্প থাকবে।
তবে, সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
সাবরিনা সুলতানা মাংসপেশীর অ্যাট্রফি রোগে আক্রান্ত এবং বি-স্ক্যান-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি এই সমাবেশের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি কৃষ্টি নামের একটি স্বাধীন শিক্ষা কেন্দ্রেরও প্রতিষ্ঠাতা। এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে।
সাবরিনা বলেন, "সমাবেশের পর আমরা আমাদের দাবিগুলি নিয়ে বিআরটিসি-তে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের জন্য প্রবেশযোগ্য বাসগুলো শীঘ্রই আমদানি করা হবে না। তাই আমরা একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতা শুরু করি।"
তিনি বলেন, "বুয়েট, চুয়েট, এমআইএসটি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রবেশযোগ্য বাসের ডিজাইন জমা দিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে নয়টি ডিজাইন আরও যাচাইয়ের জন্য নির্বাচিত হয়। বিআরটিসি আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, তারা তাদের পরামর্শক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।"
সালমা বলেন, "আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন ভারত এবং নেপালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশযোগ্য ট্যাক্সি আছে। কিন্তু আমাদের দেশে কিছুই নেই।"
২০০৯ সাল থেকে সালমা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করে আসছেন। তিনি তার সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ-এর (বিআরটিএ) সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ শুধু উদাসীনই ছিল।
২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে আবারো বৈঠক করার পর তাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়, কারণ "প্রস্তাবটি নিয়ে আরও গবেষণা এবং বাস্তবায়নযোগ্যতা প্রয়োজন।"
তিনি বলেন, "গবেষণা করা এবং এটি বাস্তবায়নযোগ্য করা আমাদের কাজ নয়।"
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেছেন, ঢাকার বিশৃঙ্খল ও বৈচিত্র্যময় নগর কাঠামো বৃহত্তর প্রবেশযোগ্যতা পরিবর্তন বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবে, ছোট ও লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগগুলো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
তিনি পরামর্শ দেন, "ঢাকার গণপরিবহন সবার জন্যই একটি দুঃস্বপ্ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তো বটেই। বিদ্যমান ফ্লিট পুনর্নির্মাণের বদলে আমরা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিবেদিত শাটল সার্ভিস চালু করার কথা ভাবতে পারি, যা এক বা দুই ঘণ্টা অন্তর চলবে। মহিলাদের জন্য একটি অনুরূপ সার্ভিস কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।"
এ ধরনের একটি সার্ভিস প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরও কার্যকরভাবে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। সিস্টেমটি একটি অনলাইন অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে, রিয়েল-টাইম আপডেট এবং সময়সূচি নির্ধারণের সুবিধা দেবে
ড. আদিল বলেন, "আমাদের ফুটপাতগুলো উন্নত করা সমানভাবে জরুরি। ধারাবাহিক, ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সড়ক পথ এবং সঠিক র্যাম্প ও স্পষ্ট সাইনেজ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চলাচল আরও সহজ করে তুলবে।"
কিছু বছর আগে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড দেশে ১ হাজার ৫০০টি সম্ভাব্য পর্যটন স্থান চিহ্নিত করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সেগুলোকে উন্নত ও উন্নয়ন করা। বি-স্ক্যানের প্রতিনিধি সালমা এই বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এসব স্থানকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশযোগ্য করার আবেদন জানান। ব্যবস্থাপকরা তার অনুরোধগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সম্মত হলেও, প্রতিশ্রুতিগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
আমরা এই উদ্যোগের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি।
'দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে চাওয়া একটা দিবাস্বপ্ন'
সালমা বলেন, "এখন আমরা দূরপাল্লার জন্য অনেক ভালো মানের আমদানিকৃত বাস দেখতে পাই। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে একটিও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য প্রবেশযোগ্য নয়। পুরো রেল ব্যবস্থায় শুধু সুবর্ণ এক্সপ্রেসেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে।"
এর ফলে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন একটি ছোট এলাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
নিগার বলেন, "আমার অফিস থেকে বছরে অনেক পেইড ছুটি পাই। সেগুলো আমি বাড়িতেই কাটাই। আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। আমার জন্য সেখানে যাওয়া এবং কিছু দিন পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেওয়া বা উবারের খরচ বহন করা সম্ভব নয়।"
জশাই একই অনুভূতি শেয়ার করে বলেন, "দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে চাওয়া আমাদের জন্য একটা দিবাস্বপ্ন। বালিতে চাকা চালানো কঠিন। তাই সৈকতে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও জন্যও সমস্যা, কারণ সেখানে সঠিক সড়ক ও সেতু নেই।"
এখন পর্যন্ত প্রতিবন্ধী মানুষের ট্যুরিজম নিয়ে কোনো সংগঠন কাজ করছে না। আগে ওপিডি নেটওয়ার্ক তাদের জন্য কিছু ইভেন্ট বা পিকনিকের আয়োজন করত। কিন্তু তহবিলের অভাবে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
নিগার বলেন, "যদি আমরা কোনোভাবে কোনো পর্যটন স্থলে পৌঁছাতেও পারি, তাহলে কী হবে? বেশিরভাগ ভবনে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত পথ নেই, র্যাম্প বা টয়লেট তো দূরের কথা। এলিভেটরের অভাবে অনেক জায়গায় যেতে পারি না। দেশের পুরো অবকাঠামো আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।"
নিগার তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি কিছু রিসোর্টে গিয়েছিলেন যেগুলো নিজেদেরকে প্রবেশযোগ্য বলে বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু তিনি দেখলেন, এই দাবি সাধারণত ভুল ছিল এবং বাস্তবিক কোনো প্রবেশযোগ্য সুবিধা ছিল না।
তিনি বলেন, "এমন কোনো সংগঠন বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই যেটি নিশ্চিত করবে, এই সুবিধাগুলো প্রকৃত প্রবেশযোগ্য মান পূরণ করে।"
'আজও আমাদের সঠিকভাবে সম্মান জানানো হয় না'
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ একটি মানবাধিকার চুক্তি 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশন (সিআরপিডি)' ২০০৮ সালে কার্যকর হয়। এই চুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষা এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করে।
এটির সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে "প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এবং সুরক্ষা আইন" প্রণয়ন করে সিআরপিডি-এর নীতিগুলো দেশের আইনগত কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে।
তবে, বাস্তবতা প্রায়ই এই নীতির উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন থাকে। সালমা বলেন, "আজও আমাদের সঠিকভাবে সম্মান জানানো হয় না।"
সালমা আরও বলেন, "যদিও সিআরপিডি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, আমাদের 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তি' হিসেবে সম্বোধন করা উচিত, আমরা প্রায়ই 'বিশেষভাবে সক্ষম' বা 'ভিন্নভাবে সক্ষম' হিসেবে চিহ্নিত হই। অনেকেই, সঠিক পরিভাষা জানেন না। তাই আমাদেরকে পুরোপুরি সম্মান জানানো হয় না, এমনকি ফরমাল অনুষ্ঠানগুলোতেও। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে আমাদের সঠিকভাবে সম্বোধন করা দরকার।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়