চলতি বছর সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চলতি বছর প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণের শেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার। ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপটিতে আর কোন পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারবেন না। টানা ৯ মাস পর আগামী নভেম্বরে আবারও যেতে পারবেন পর্যটকরা। তবে নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রি যাপনের কোনো অনুমতি নেই। রাত্রি যাপন করা যাবে শুধু মাত্রা ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই ২ মাস।
ফলে শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়া সময়সীমা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে দ্বীপবাসী। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন স্টেশনে দ্বীপবাসীর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় হোটেল-মেটেল ও কটেজ মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টুয়াক, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, ট্রলার মালিক সমিতি, স্পিডবোট মালিক সমিতি, ভ্যান গাড়ি মালিক-শ্রমিক সমিতি এবং বাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কয়েকশ লোকজন অংশগ্রহণ করেছেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটক যাতায়াত সীমিত থাকায় এমনিতেই দ্বীপবাসী নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। তার উপর দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারি নির্দেশনা বহাল রাখায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে দ্বীপবাসী।
সেন্টমার্টিন বাজার সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের পর পথসভায় বক্তব্য রাখেন, টুয়াক-এর সদস্য আকতার নুর, আইনজীবী ও সমাজকর্মী কেফায়েত উল্লাহ খান, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী নুর মোহাম্মদ, সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ খান ও হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
এ নিয়ে টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মানববন্ধনের বিষয়টি আমি শুনেছি। পর্যটন মৌসুমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখানকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য মানববন্ধন করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সকলকে অবহিত করা হয়েছে।
গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীন স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে। সিদ্ধান্ত হয়, নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। ফেব্রুয়ারি থেকেই বন্ধ থাকবে পর্যটকের দ্বীপ ভ্রমণ।
সিদ্ধান্তের আলোকে ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণের সীমাবদ্ধ মেনে চলার শর্তে কক্সবাজার শহর থেকে দ্বীপে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
তিনি বলেন, অনুমতি পাওয়া জাহাজগুলো ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে যাবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যাবে না।
এদিকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। গত ২৮ জানুয়ারি দিন ধার্য থাকলেও রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আদালত পরবর্তীতে শুনানীর জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করছেন।