চীন, ভারতের জি-টু-জি ঋণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঝুঁকি, সতর্ক করল টাস্কফোর্স
বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ছে, বিশেষত প্রতিবেশী ভারত ও চীনের থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া সরকার থেকে সরকার পর্যায়ের (জি-টু-জি) ঋণগুলো এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্স।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ধরনের ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়নকে জটিল করে তোলে। জি-টু-জি ঋণে প্রায়ই কম সুদহারের প্রস্তাব ও মেয়াদ বাড়ানোর সুবিধা দেওয়া হলেও— এগুলোর সঙ্গে যেসব কৌশলগত শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় – তা কেবল আর্থিকক্ষেত্রেই সীমিত থাকে না।
ভূরাজনৈতিক গতিশীলতার পরিবর্তনশীল অবস্থার মধ্যে এসব তহবিল ছাড় আরো বেশি করে প্রভাবিত হচ্ছে, যেকারণে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বিদেশিদের রাজনৈতিক চাপের ঝুঁকির মধ্যে আছে।
ঋণ ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ
যেমন বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে ঋণ দিয়েছে ভারত, কিন্তু এগুলোর জুড়ে দেওয়া হয় ক্রয়ের কঠিন শর্ত। এই ধরনের একটি শর্ত হচ্ছে, এলওসির অধীন প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ উপকরণ ও সেবা কিনতে হবে ভারত থেকেই। ফলে আরো উন্নত মানের উপকরণ অন্যত্র থেকে কম দামে কেনার সুযোগ থাকে না বাংলাদেশের। পাশাপাশি ভারতীয় এলওসিগুলো থেকে অত্যন্ত ধীরগতিতে অর্থছাড় করা হয়েছে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নকে ব্যাহত করেছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলওসির আওতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে মাত্র ১৫০ কোটি ডলার ছাড় করা হয়। অর্থাৎ, ঋণ ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, সার্বিক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই প্রায়ই অর্থছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেকারণে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে।
একইরকম প্রতিকূলতা আছে চীনের জি-টু-জি অর্থায়ন নিয়েও।
চীন বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্থিক সহায়তা দিলেও, তাদের ঋণ প্রদানের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ঋণগ্রহীতা দেশের দেনাগ্রস্ত হয়ে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও এমন আলোচনা আছে।
তাছাড়া, জি-টু-জি ঋণের বেলায় ভূরাজনৈতিক প্রভাবকগুলো ঋণের শর্ত নির্ধারণ, প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থছাড়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। যেকারণে বাংলাদেশের বিদেশি প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা তৈরি হয়।