বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, ঢাকার না
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে একটি ফার্নিচার কারখানার জন্য। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকারপাতিয়া ওব্লাস্টের একটি ফার্নিচার কোম্পানি শ্রমিক সংকটের কারণে ১৬০ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চাইছে।
স্থানীয় গভর্নর মিরোস্লাভ বিলেটস্কি ২৫ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেন।
দ্য নিউ ভয়েস অভ ইউক্রেনের তথ্যমতে, তিয়াচিভস্কা নগর আঞ্চলিক কমিউনিটি-ভিত্তিক লামেলা স্টেট এন্টারপ্রাইজ কর্মসংস্থান চুক্তির আওতায় কর্মী নিয়োগের জন্য ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে।
ইউক্রেন-সংক্রান্ত বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস এই নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করতে রাজি হয়নি।
পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর এবং চ্যান্সেরির প্রধান কাজী এম মোর্শেদ ফোনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল একটি ইউক্রেনিয়ান রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি। যেহেতু ইউক্রেনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, তাই আমরা সেখানে কর্মী পাঠাতে মত দিইনি।'
তিনি আরও জানান, পরে একটি বাংলাদেশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কাছে আটজন কর্মী ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করে।
'পরে বিএমইটি গত ৯ ডিসেম্বর আমাদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে আমরা সম্মতি দিইনি।'
কাজী এম মুর্শেদ আরও বলেন, 'এর আগে ভারত ও উত্তর কোরিয়ার লোকজন রুশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা মিডিয়ায় এসেছে। এমন অবস্থায় আমাদের নাগরিকরা যদি ইউক্রেনে যায়, তাহলে কী হবে আমরা জানি না। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়েই আমরা বেশি শঙ্কিত।'
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম টিবিএসকে বলেন, চাকরির নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পরে তিনি আরও বিস্তারিত জানাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর অনেক বাংলাদেশি দেশটি ছেড়ে চলে যান।
যুদ্ধের আগে ১ হাজার ৫০০-র বেশি বাংলাদেশি ইউক্রেনে বাস করতেন। তবে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইউক্রেনে এখন অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশি রয়ে গেছেন। তাদের বেশিরভাগই কিয়েভে থাকেন।
ইউক্রেনে কর্মী সংকট
গভর্নর বিলেটস্কি বলেন, ২০০১ সালে চালু হওয়া লামেলা স্টেট এন্টারপ্রাইজ ছোট ফার্নিচারের উপকরণ কারখানা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। পরে প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি করা প্রধান প্রস্তুতকারক হয়ে ওঠে।
এ কারখানায় বর্তমানে ৪৩০ জন কর্মী কাজ করেন। তবে উৎপাদন সম্প্রসারণ করায় তাদের জন্য ৭০০ কর্মী প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় চাহিদা তৈরি করেছে, সরঞ্জাম ও উপকরণ কিনেছে, তারা এখন তীব্র শ্রমিক সংকটের মুখে।
কোম্পানিটি একটি সামাজিক সুবিধা প্যাকেজ দিচ্ছে। এ প্যাকেজে রয়েছে বিনামূল্যে খাবার, ৫০ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে পরিবহন সুবিধা এবং মাসে গড়ে ২৫ হাজার ইউক্রেনীয় (প্রায় ৬০০ ডলার) মুদ্রা বেতন।
তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরা বলা হয়েছে, কিছু ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা স্থানীয় জনশক্তি ব্যবহার না করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইউটিলিটিজ কনজিউমার ইউনিয়নের প্রধান ওলেহ পোপেনকো বলেন, ইউক্রেনের 'লক্ষ লক্ষ' শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের 'কোনো চাকরি নেই'; টিকে থাকার জন্য তারা লড়াই করছেন।
কর্মসংস্থান পরিষেবা তাদের প্রচেষ্টার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, তারা গত বছরে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে চাকরি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ৪২ হাজার অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিও রয়েছেন।
স্টেট এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান আন্দ্রেই ইয়ানিটস্কি বলেন, ইউক্রেনে লাখ লাখ মানুষ যুদ্ধে লড়ছে অথবা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। তাই দেশটিতে বেকারত্ব দ্রুত শ্রমিক সংকটে পরিণত হচ্ছে। 'শ্রমিক অভিবাসন তাই অনিবার্য,' বলেন তিনি।
রাশিয়ায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার
এদিকে রাশিয়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ।
গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন।
২০২২ সাল থেকে রাশিয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে জাহাজ নির্মাতা, নির্মাণ শ্রমিক এবং হসপিটালিটি ও পরিবহন কর্মী নিয়োগ রেছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য তুলনামূলকভাবে নতুন বাজার রাশিয়া যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের চাহিদার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জন্য আশাব্যঞ্জক গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।