পুতিনকে ট্রাম্প: ‘হাস্যকর যুদ্ধ’ বন্ধ করুন, নয়ত নতুন করে নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দেশটির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে সতর্ক করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর রাশিয়ার প্রতি এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলেন তিনি।
ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে তিনি রাশিয়া এবং তার প্রেসিডেন্টকে (পুতিন) "খুব বড় উপকার" করছেন।
ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার এ আক্রমণ নিয়ে এক দিনের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবেন।
রাশিয়া এখনও ট্রাম্পের এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মস্কোর জন্য নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার ছোট একটি সুযোগ রয়েছে।
এর আগে পুতিন বহুবার বলেছেন, তিনি ২০১৪ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ শেষ করতে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার আঞ্চলিক অর্জনগুলো মেনে নিতে হবে। তিনি ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়েও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কিন্তু কিয়েভ তার অঞ্চল ছেড়ে দিতে রাজি নয়। যদিও প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন যে তাকে কিছু দখলকৃত জমি সাময়িকভাবে ছেড়ে দিতে হতে পারে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি "খুব শীঘ্রই" পুতিনের সাথে আলাপ করবেন। তবে রাশিয়ার এ নেতা যদি আলোচনার টেবিলে বসতে সম্মত না হন, তাহলে 'সম্ভবত' নিষেধাজ্ঞার পরিসর আরও বাড়ানো হবে।
কিন্তু বুধবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশাল পোস্টে আরও একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, "অর্থনৈতিক দিক থেকে পতনের মুখে থাকা রাশিয়া ও প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একটি খুব বড় উপকার করব।"
পোস্টে তিনি লিখেছেন: "এখনই সমঝোতা করুন এবং এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করুন! এটা কেবল আরও খারাপ হতে চলেছে। যদি আমরা শিগগিরই 'চুক্তি' না করি, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে রাশিয়া যেসব পণ্য বিক্রি করে থাকে, সেগুলোর ওপর উচ্চমাত্রার ট্যাক্স, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।''
তবে কোন ক্ষেত্রগুলোতে বা কখন আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনটি ট্রাম্প।
২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার আমদানির পরিমাণ অনেক কমে গেছে এবং ইতিমধ্যেই রাশিয়ার ওপর নানা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, "আসুন যুদ্ধটি বন্ধ করি, যা আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে কখনোই শুরু হতো না! আমরা এ কাজটি সহজ উপায়ে করতে পারি, অথবা কঠিন উপায়ে। আর সহজ উপায় সবসময়ই ভালো। 'একটি চুক্তি করার' সময় এসেছে।"
এর আগে জাতিসংঘে রাশিয়ার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ট্রাম্প কি চাচ্ছেন, সেটি আগে জানতে হবে। তারপর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বলেছেন, যেকোনো চুক্তির আওতায় কমপক্ষে দুই লাখ শান্তিরক্ষী প্রয়োজন হবে।
অপর এক সাক্ষাৎকারে তিনি ব্লুমবার্গকে বলেন, তার দেশের জন্য যেকোনো শান্তিরক্ষী বাহিনীতে মার্কিন সেনাদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি বাস্তবসম্মত প্রতিরোধ সৃষ্টি করা যায়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অনেকেই মনে করেছেন, আরো নিষেধাজ্ঞা আরাপ করা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি দুর্বল জবাব। পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো শান্তি আলোচনা করতে গিয়ে আসলে কী নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক, ইউক্রেনীয়দের বেশিরভাগের কাছে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন?
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক