শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান–এমডি’র বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলীসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুদকের একটি উর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুদকের পরিচালক খায়রুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গতকাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, দ্রুতই পূবালী ব্যাংকের অভিযুক্ত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হবে।
এর আগে টিবিএস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে পূবালী ব্যাংকের ডলার কারসাজির মাধ্যমে ২১১ কোটি টাকার অনিয়ম উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে গিয়ে ব্যাংকটি একটি শাখার মাধ্যমে অতিরিক্ত ২১১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এতে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির সরকারি তহবিলের ৫.২৮ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে, যা বাড়তি অর্থের সঙ্গে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূবালী ব্যাংকের শুধু একটি শাখায় এমন অনিয়ম পাওয়া গেছে। অন্যান্য অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখাগুলোতে পরিদর্শন করলে আরও বড় ধরনের অনিয়ম উদঘাটিত হতে পারে।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কীভাবে ব্যাংকটি নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনে সরকারি অর্থের অপচয় করেছে, তা পরিদর্শনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন ডলারের রেট ১০৯ থেকে ১১০.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন পূবালী ব্যাংক ১১৩ থেকে ১২৩.৬০ টাকায় ডলার কিনেছে।
২০২২ সালের এপ্রিল থেকে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকায় ও আমদানি দায় বাড়ায় ডলার সংকট দেখা দেয়। তখন ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানির জন্য ভিন্ন ভিন্ন রেট দিতে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পূবালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সেন্ট্রালাইজড ট্রেড প্রসেসিং ইউনিট বৈদেশিক মুদ্রার রেট নির্ধারণ করলেও আমদানি বিলের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। এতে ব্যাংকটি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৪৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
এছাড়া, মতিঝিল ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার একাধিক হিসাবে এসব অর্থ স্থানান্তর করা হয়। অনুমোদন না নিয়েই বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর নামে ব্যাংকটি সাতটি হিসাব খোলে।
দুদক সূত্র জানায়, ফরহাদ হোসেন নামক এক ব্যক্তি গত সেপ্টেম্বর মাসে কমিশনে অভিযোগ দেন। এতে পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার, পরিচালক ফাহিম আহমেদ ফারুক এবং পরিচালক খবিরুজ্জামান ইয়াকুবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশন এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে।