ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এক হাজার ৪১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের ৪ মামলা
জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সুদ ও আসলসহ মোট এক হাজার ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৪টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েট ও দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড সংক্রান্ত মামলায় দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আরিফ হাসানসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পরস্পর যোগসাজশে টেলিভিশনটির কতিপয় কর্মচারীর নাম ব্যবহার করে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলেন।
এরপর ১৬ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেটের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের জমি অন্যের হলেও সেটিকে নিজেদের জমি দেখিয়ে এই ঋণ নেওয়া হয়।
হাসান টেলিকমের নামে সম্পত্তির মর্টগেজ সম্পর্কিত তথ্য গোপন রেখে, ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও উত্তোলন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।
গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ১৭৮.৮৯ কোটি টাকাসহ মোট ৬৬৮.৮৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, দুই পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও তওসিফ সাইফুল্লাহসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেড সংক্রান্ত মামলায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অবৈধভাবে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরে সুদ-আসলসহ ৫৮৩.১৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলম আহমেদ, পরিচালক বাবু হরিদাস বর্মন, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার।
অন্যদিকে প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েট নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সুদসহ ২১.২৪ কোটি টাকাসহ মোট ১০১.২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ-উজ্জামান খান, ন্যাশনাল ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু রাশেদ নোয়াবকে আসামি করা হয়েছে।
দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড সংক্রান্ত মামলায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের কুয়াকাটা শাখা থেকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সুদাসলে ৬১.২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন দি ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ সারওয়ার, পরিচালক মোস্তফা মঈন সারওয়ার, ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ, প্রিন্সিপাল অফিসার ও কুয়াকাটা শাখা ব্যবস্থাপক (চাকরিচ্যুত) রুমি ইমরোজ রশিদ, সাবেক পরিচালক মনোয়ারা সিকদার ও রিক হক সিকদার।