খুলনাকে কাঁদিয়ে এক যুগ পর বিপিএলের ফাইনালে চিটাগং কিংস
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/05/nafay.jpg)
লক্ষ্য খুব একটা বড় ছিল না। সেই লক্ষ্য তাড়ায় বাজে শুরুর পরও আলোর পথ খুঁজে পায় চিটাগং কিংস। খাজা নাফে ও হুসেইন তালাতের দারুণ জুটিতে লড়াই চালাতে থাকে দলটি, তখন মনে হয়েছিল সহজেই জিতে যাবে চিটাগং। কিন্তু এ দুজনকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন খুলনা টাইগার্সের নাসুম আহমেদ ও মুশফিক হাসান। কিন্তু এই মোড়ও ঘুরে গেল চিটাগংয়ের দুই স্পিনার আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলামের ব্যাটে, ম্যাচ গড়ালো শেষ ওভারের রোমাঞ্চে। যেখানে থাকলো শরিফুল ইসলামের অবদানও। অবিশ্বাস্য জয়ে ফাইনালে উঠে গেল চিটাগং কিংস।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষে খুলনা টাইগার্সকে ২ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগং কিংস। ১২ বছর পর বিপিএলের ফাইনালে উঠলো দলটি। সর্বশেষ ২০১৩ বিপিএলের ফাইনাল খেলে তারা, শিরোপার লড়াইয়ে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে হারে তারা। এরপর আসরটিতে আর অংশই নেয়নি দলটি। এক যুগ পরে ফিরেই ফাইনালের টিকেট কাটলো চিটাগং। শিরোপার লড়াইয়ে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে লড়বে তারা।
তবে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, বদলে যাওয়ার গল্প লিখতে হয়; সেটার উদাহরণ হয়ে থাকতে পারতো খুলনা। প্লে-অফে ওঠা নিয়েই যারা ঘোর অনিশ্চয়তায় ছিল, সেই দলটিই টানা তিন জয়ে কোয়ালিফায়ারে জায়গা কতরে নেয়। লিগ পর্বের ১০ ম্যাচে চারটিতে জেতে খুলনা, প্লে-অফে উঠতে শেষ দুটি ম্যাচে জিততেই হতো তাদের। ম্যাচ দুটি জিতে এলিমিনেটর ম্যাচ নিশ্চিত করে মিরাজ-নাঈমদের দল। এখানে তারা হারায় রংপুর রাইডার্সকে। আজ ভালো সম্ভাবনা তৈরি করেও শেষ ওভারের স্নায়ুযুদ্ধ আর জিততে পারলো না খুলনা, হৃদয়ভাঙা হারে বিদায় নিতে হলো বিপিএল থেকে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে খুলনা টাইগার্স। অগোছালো শুরুর পর মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের ইনিংস, রান তুলতেই রীতিমতো ধুঁকছিলো দলটি। দিক হারানো দলটির হাল ধরে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমেয়ার, কার্যকরী ইনিংস খেলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও। এ দুজনের ব্যাটে ৬ উইকেটে ১৬৩ রান তোলে খুলনা। জবাবে নাফে-তালাতের দারুণ ব্যাটে অনেকটা এগিয়ে গিয়েও পথ হারায় চিটাগং। সেখান থেকে হাল ধরে দারুণ এক জুটি গড়া সানি ও ম্যাচসেরা আলিসের লড়াইয়ে শেষ বলে জয়ের আনন্দে মাতে চিটাগং কিংস।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য চিটাগংয়ের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান, উইকেটে সানি ও আলিস। খুলনা অধিনায়ক মিরাজ বল তুলে দেন পেসার মুশফিক হাসানের হাতে। প্রথম বলে চার মারা সানি পরের বলে তোলেন দুই রান। তৃতীয় বল থেকে আসে এক রান, তবে এই রান নিতে গিয়ে চোট পান আলিস। মাঠ ছাড়েন তিনি, উইকেটে যান শরিফুল। চতুর্থ বলে চার মেরে পরের বলে আউট হয়ে যান বাঁহাতি এই পেসার। শেষ বলে চিটাগংয়ের দরকার দাঁড়ায় ৪ রান। মুশফিকের অনেক বাইরে করা বলে চার মেরে চিটাগংকে জয়ের উল্লাসে মাতান আলিস।
ম্যাচ এই অবস্থায় আসতোই না, যদি কিনা সানি ও আলিস ব্যর্থ হতেন। লক্ষ্য তাড়ায় নাফে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে থাকলেও অন্য প্রান্তে ছিলো উল্টো চিত্র। ৩৫ রানের মধ্যেই পারভেজ হোসেন ইমন ও গ্রাহাম ক্লার্ক সাজঘরে ফিরে যান, চিটাগংয়ের রান তোলার গতিও কমে আসে। এখান থেকে হাল ধরেন নাফে ও তালাত, চাপ সামলে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন তারা। তৃতীয় উইকেটে ৪৮ বলে ৭০ রান যোগ করেন পাকিস্তানের এই দুই ক্রিকেটার।
তখন মনে হচ্ছিল, জয় পাওয়া কঠিন হবে না চিটাগংয়ের জন্য। কিন্তু এখান থেকেই বাঁক বদল, দুই ওভারের ব্যবধানে ফিরে যান নাফে ও তালাত। ৪৬ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৭ রান করেন নাফে। ২৫ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ঝড়ো ৪০ রান করেন তালাত। এরপর দ্রুত ফিরে যান শামীম হোসেন পাটোয়ারী, অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ও খালেদ আহমেদ। হঠাৎ দিক হারিয়ে বসা দলটির আশা বেঁচে থাকে সানি ও আলিসের দৃঢ়তায়।
অষ্টম উইকেটে ১৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। এরপর সানি ও শরিফুলের ৪ রানের জুটি। শরিফুলের বিদায়ের পর আবারও সানি ও আলিসের লড়াই। দুই দফায় ৩০ রান যোগ করেন অপরাজিত থাকা এ দুজন। বাঁহাতি স্পিনার সানি ১৩ বলে ২টি চারে ১৮ ও শেষ বলে চার মেরে দলকে জেতানো আলিস ৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৭ রান করেন। খুলনার হাসান মাহমুদ ও মুশফিক হাসান ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান নাসুম আহমেদ।
এর আগে ব্যাটিং করা খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন হেটমেয়ার। বাঁহাতি ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৩ রান করেন। ৩২ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪১ রান করেন। খুলনার আর কেউ ২০ রানের সীমা পার হতে পারেননি। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাঈম শেখ ১৯ ও জেসন হোল্ডার ১২ রান করেন। চিটাগংয়ের লঙ্কান পেসার বিনুরা ফার্নান্দো ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন শরিফুল, আলিস, খালেদ ও সানি।