১০০ বছর আগে সংরক্ষিত প্রাণিদেহ থেকে নতুন প্রজাতির হনুমান আবিষ্কার
পৃথিবীতে নতুন প্রজাতির হনুমানের সন্ধান পেয়েছেন বানর বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। মিয়ানমারের ইরাবতি নদীর পূর্বপাশের পোপা পর্বতে এই হনুমানের দেখা পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন "পোপা হনুমান"। দেখতে অনেকটা চশমাপরা হনুমানের মত হলেও বাস্তবে তার সাথে অনেক তফাত রয়েছে। তবে এটি চশমাপরা হনুমানের মত ট্রাছিপিথেকাস গোত্রের প্রাণী। এই গোত্রের অধিনে পোপা হনুমানসহ ২২ প্রজাতির হনুমান আছে।
জার্মান প্রাইমেট সেন্টার এবং ফনা এন্ড ফ্লোরা ইন্ট্যারন্যশালের উদ্যোগে ১১টি দেশের ২৯ জন গবেষক মিলে এই নতুন হনুমানটি আবিষ্কার করেন।
এই দলে থাকা বাংলাদেশী গবেষক তানভীর আহমেদ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নতুন হনুমান আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা- আইইউসিএনের বানর বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য তানভীর আহমেদ ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমান নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।
এই গবেষক আরও জানান, ১৯১৩ সালে গুই সরট্রিডজ নামের একজন গবেষক মিয়ানমারের পোপা পর্বত থেকে একটি মৃত হনুমান সংগ্রহ করেন, যেটি বর্তমানে লন্ডনের নেচার হিস্টরি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এতদিন এই প্রাণিকে চশমাপরা হনুমান হিসেবেই গন্য করা হত।
কিন্তু, এক বছর আগে ইংল্যান্ডের নেচার হিস্টরি মিউজিয়ামে যেসব প্রানী সংরক্ষিত আছে তার মধ্য থেকে চশমাপরা হনুমানের শ্রেণিবিন্যাস পুনঃপরীক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা প্রাণীগুলোর শারীরিক ও জিনগত পরীক্ষা চালান। একই সময়ে মায়ানমার থেকে বন্য পোপা হনুমানের মল সংগ্রহ করা হয়। সেই সাথে আমেরিকা, নেদারল্যান্ড, ,ইংল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরসহ ৭টি দেশের ৪ চিড়িয়াখানা ও ৩ মিউজিয়াম থেকেও বিভিন্ন চশমাপরা হনুমানের মল ও চুল সংগ্রহ করে জার্মানির প্রাইমেট সেন্টারে নেওয়া হয়।
সেখানে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। জিন পরীক্ষা জার্মানিতে করা হলেও সকল শারীরিক পরীক্ষা লন্ডনের নেচার হিস্টরি মিউজামেই করা হয়।
প্রায় ১৮ বছর আগে বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে সংগৃহীত চশমাপরা হনুমানের একটি মলের নমুনাও ঐ জিন পরীক্ষায় ব্যবহত হয়।
গবেষক তানভীর আহমদ আরও জানান, বনভূমি ধ্বংস ও শিকারের কারনে পোপা হনুমান পৃথিবীতে মহাবিপন্ন অবস্থায় আছে। মায়ানমারের ইরাবতি নদীর পূর্বপাশের পোপা পর্বত এলাকায় ২০০ থেকে ২৫০ টি থাকতে পারে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। এ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এই প্রজাতি নেই।
পোপা হনুমান আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জুলজিকাল রিসার্সে গতকাল (১১ নভেম্বর) প্রকাশ হয়েছে।
পোপা হনুমান দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চশমাপরা হনুমানের মনে হলেও, গঠনগতভাবে বাংলাদেশের চশমাপরা হনুমানের লেজের থেকে পুরুষ পোপা হনুমানের লেজ গড়ে প্রায় ১৪০ সেন্টিমিটার বড়।
পোপা হনুমান সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ১৫০০ মিটার উঁচুতে বসবাস করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের চশমাপরা হনুমান সাধারণত ৫০০ মিটারের কম উচ্চতায় বসবাস করে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) এর ২০২০ সালের সর্বশেষ (সেপ্টেম্বর) তালিকা অনুসারে পৃথিবীতে ৮০টি গোত্রের অধিনে ৫০৭ প্রজাতির বানর জাতীয় প্রানী আছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চলতি সহস্রাব্দে ৯৬টি নতুন বানর জাতীয় প্রাণি আবিষ্কৃত হয়। এরমধ্যে এশিয়া মহাদেশে পাওয়া যায় ১৬টি প্রজাতি। পোপা হনুমান আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে পৃথিবীতে ৫০৮টি প্রজাতির হনুমান শনাক্ত হল।