দারুণ জয়ে ফেরার পর্ব রাঙালো বাংলাদেশ
দীর্ঘদিন পর চিরচেনা আঙিনায় ফেরা। ফেরার পর্বে দর্শকদেরও পাশে পেলেন জামাল ভূঁইয়ারা। ঘরের মাঠ, গ্যালারিতে ৮ হাজার দর্শকের গর্জন; এমন পরিবেশে নেপালকে আর কঠিন প্রতিপক্ষ থাকতে দিল না বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের দীর্ঘ বিরতির পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলতে নেমে দাপট দেখালো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ফুটবল সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার শাসন করেই নেপালকে হারালো জামাল ভূঁইয়ার দল।
দুটি প্রীতি ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে গোল করেছেন নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মাহবুবুর রহমান। এই জয়ে নেপাল বাধা টপকালো বাংলাদেশ। দলটির বিপক্ষে নামলেই হার সঙ্গী হচ্ছিল জামালদের। সর্বশেষ তিন ম্যাচেই নেপালের বিপক্ষে হার মানে বাংলাদেশ। অবশেষে মিলল স্বস্তির জয়ের দেখা।
দীর্ঘ ১০ মাস পরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ জানুয়ারিতে বুরুন্ডির বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছিল জামাল ভূঁইয়ার দল। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে মার্চে সব ধরনের ফুটবল স্থগিত হয়ে যায়। গত ২৪ অক্টোবর থেকে অনুশীলন শুরুর পর ম্যাচও খেলে ফেললো বাংলাদেশ। আর ফেরার পর্বটাও হলো রঙিন ঝলমলে।
ফেরার পর্বে সবই থাকলো। দীর্ঘদিন পরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখা গেল সেই হুই-হুল্লোড়। বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে চিৎকার, গোলের পর আনন্দ, উচ্ছ্বাস। এক দিকে লাল-সবুজের পতাকা উড়ছিল খোলা আকাশে, আরেকদিকে চলছিল জামাল ভূঁইয়া-মাহবুবুর রহমানদের গোল উদযাপন।
নেপালের বিপক্ষে সর্বশেষ তিন ম্যাচে হারের ব্যাপারটি বারবার উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। জানিয়েছিলেন এবার কোনোভাবেই আর হারা যাবে না। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই তাই প্রতিপক্ষের ওপর রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরুতেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে জামাল-জীবনরা।
মুহুর্মুহ আক্রমণে নেপালের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত করে তোলে বাংলাদেশ। ৮ মিনিটেই গোলের সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ডিফেন্ডার বিশ্বজিত ঘোষের লম্বা থ্রো ইন থেকে কেউ বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লক্ষ্য শট নিতে পারেননি।
গোলের দেখা পেতে অবশ্য বেশি দেরি করতে হয়নি। ম্যাচের দশম মিনিটে নেপালের জাল খুঁজে পায় বাংলাদেশ। ডি-বক্সের ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন। ডি-বক্সে বল পেয়ে বাঁ পায়ের আলতো টোকায় গোল আদায় করে নেন নাবিব নেওয়াজ জীবন।
১-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের গোলক্ষুধা যেন আরও বেড়ে যায়। বল নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে শাসন জারি রাখাসহ আক্রমণ সাজাতে থাকে জামাল ভূঁইয়ার দল। ২১ মিনিটে দারুণ গোলের সম্ভাবনা জেগেছিল। ডান প্রান্ত থেকে ক্রস করেন জীবন। পাঞ্চ করে দলকে রক্ষা করেন নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বু। ফিরতি বলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম হেড দিলেও জালের ঠিকানা মেলেনি।
দুই মিনিট পর আরও একটি সুযোগ তৈরি করে বাংলাশে। ২৩তম মিনিটে বিশ্বজিতের বাড়ানো খুঁজে পায় তপু বর্মণকে। কিন্তু ডি-বক্স ফাঁকা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। তপুর নেওয়া শট বার ঘেষে বেরিয়ে যায়।
গোলের খোঁজে মরিয়া বাংলাদেশ আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে। ২৭তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন হতে পারতো। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে মানিক মোল্লার জোরালো শট গোলবারে লেগে ফিরে আসে। ৩২তম আবারও সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সাদ উদ্দিনের ক্রসে জীবনের নেওয়া হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি কমে আসে। দুই দল বল দখলের লড়াইয়েই বেশি সময় ব্যয় করতে থাকে। এ সময় মাঝমাঠেই এলোমেলো ফুটবল খেলেছে দুই দল। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের গুছিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ৭৬ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। অসাধারণ এক শট নেন তপু বর্মণ। পাঞ্চ করে দলকে বিপদমুক্ত করেন নেপাল গোললক্ষক।
চার মিনিট পরে দেখা মেলে গোলের। ৮০তম মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো পাস থেকে বল পেয়ে গোলমুখে ছুটতে থাকেন ৫৮তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামা মাহবুবুর রহমান। বাংলাদেশের এই ফরোয়ার্ডের গতির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে নেপালের রক্ষণভাগ। দারুণ প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান মাহবুবুর। এরপর আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চললেও কোনো দলই আর গোলের দেখা পায়নি।