‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ শুধু ঘোষণাতেই, বাস্তবায়ন কম
সকাল দশটার আগে থেকেই নগর ভবনে সেবা প্রত্যাশীদের আগমন বাড়তে থাকে। ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স ইস্যু, মামলার শুনানি থেকে শুরু করে নানা কাজে প্রতিদিনই এখানে অসংখ্য মানুষকে আসতে হয়। কিন্তু সেবা প্রত্যাশী বেশিরভাগ মানুষকেই মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহী দেখা গেছে। যদিও সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৩ নভেম্বর 'নো মাস্ক নো এন্ট্রি' কড়াকড়িভাবে পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছে।
এর আগে অবশ্য 'নো মাস্ক নো সার্ভিসের' ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের প্রবেশমুখে কোথাও নো মাস্ক নো এন্ট্রি নির্দেশনা দেয়া নেই। সিকিউরিটি গার্ডরা মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে বাধাও দিচ্ছেন। বরং কিছু কিছু সিকিউরিটি গার্ডকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
সেবা নিতে আসা এক ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম মাস্ক থুতনির নিচে ঝুলিয়ে প্রবেশ করছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অনেক সময় মাস্ক পরে ছিলাম। তাই একটু সময়ের জন্য খুলেছি।'
আরেক সেবা প্রত্যাশী প্রবেশ মুখের ডান পাশে বসে মাস্ক খুলে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। নো মাস্ক নো এন্ট্রির সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে জানেন কি না জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, 'ফোনে কথা বলার সময় মাস্ক থাকলে একটু সমস্যা হয়। এজন্য খুলেছি, ভিতরে যাওয়ার সময় আবার পরবো।'
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা রোববার একটি সভা করেছি। সোমবার থেকে কাউকেই মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। লিফটের মধ্যেও গাদাগাদি করে সেবা প্রত্যাশীদের উঠতে দেয়া হবে না। একইসঙ্গে সব জায়গায় ব্যানার করে নো মাস্ক নো এন্ট্রির প্রচারণা চালানো হবে।'
ঢাকার খামাড়বাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ভবনের সবগুলো ফ্লোরেই বড় ব্যানারে লিখা রয়েছে 'নো মাস্ক নো এন্ট্রি'। কিন্তু সেটা মানতে বাধ্য করার মত কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। তবে নগর ভবনের তুলনায় এখানে আসা সেবা প্রত্যাশিতের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা একটু বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অবার কিছু মানুষকে মাস্ক ছাড়াই সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে দেখা গেছে।
মাস্ক ব্যবহারের ঢিলেঢালা এই চিত্র কমবেশি রাজধানীর সব অফিসেই লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে এই চিত্র আরো প্রকট। কোথাও কোথাও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা যাচ্ছে না।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সিলেট প্রতিনিধি জানান, সেখানেও মাস্ক পরায় একটা ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে মানুষের মধ্যে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের দেয়ালে লেখা রয়েছে- 'মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।' তবে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই ওই অফিসে প্রবেশ করছেন অধিকাংশ মানুষ।
এরকম একজন মিসবাউর রহমান। এসেছেন সিলেটের বালাগঞ্জ থেকে। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাস্ক পকেটে আছে। দীর্ঘক্ষণ পরলে দমবন্ধ লাগে। তাই পকেটে রেখেছি। কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশের আগে মুখে লাগিয়ে নেবো।
দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থীদের মুখেই মাস্ক নেই। অনেক রোগীও মাস্কবিহীন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, 'আমরা সকলকে মাস্ক পরে আসার কথা বলছি। বর্হিবিভাগে মাস্ক ছাড়া আসলে কোনো রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু দর্শনার্থীদের অনেকেই নির্দেশনা মানছেন না। আগামীতে তাদের বিষয়ে আমরা আরও কঠোর হবো।'
সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়েও দেখা গেছে, মাস্ক ছাড়া কার্যালয়ের বারান্দায় হাটাহাটি করছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, মাস্ক ছাড়া আসলে আমরা কাউকেই অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। তবে এ ব্যাপারে মানুষজনকেও সচেতন হতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সবার মাস্ক পরা উচিত।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খুলনা প্রতিনিধি জানান, করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মধ্যেও খুলনায় মাস্ক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা নেই।
অধিকাংশ অফিসের সামনে 'নো মাস্ক, নো এন্ট্রি' লেখা থাকলেও সেবা প্রত্যাশীরা অনেক সময় মাস্ক ছাড়াই এসব জায়গায় প্রবেশ করছে। এ কারণে ৯ নভেম্বর থেকে খুলনা মহানগরীতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে।
অভিযানের প্রথম দিনেই ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর চারটি স্থানে অভিযান চালায়। ওই সময় মুখে মাস্ক না পরার অপরাধে ৫৮জনকে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ২৫ জনকে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমদ বলেন, সাধারণ মানুষ মানসিক ও সামাজিকভাবে সচেতন না হলে শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। শুধু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আর প্রশাসনের উদ্যোগ নয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।