দেশে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক টোল আদায় পদ্ধতি
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে ইটিসি বা ইলেকট্রনিক টোল আদায় পদ্ধতি। প্রথম পর্যায়ে দেশের প্রধান তিন সেতু-- মেঘনা, গোমতী ও ভৈরবে এ পদ্ধতি চালু হবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
এ পদ্ধতিতে নগদ টোল আদায়ের পরিবর্তে গাড়ির উইন্ড শিল্ডে সংযুক্ত হবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিভাইস (আরএফআইডি) ট্যা্গ। এর সঙ্গে টোল প্লাজায় স্থাপিত ইটিসি ডিভাইস ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে।
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিভাইসটি মূলত কাজ করে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি অনেকটা পণ্যের বারকোড দেখার প্রযুক্তির মতো। তবে পার্থক্য হল, আরএফআইডি ব্যবহার করে কিছুটা দূরের ট্যাগ বা কোডও পড়া যায়।
এতে টোল প্লাজায় দীর্ঘ সময় যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হবে না বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তর ঢাকা জোনের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, "ধীরে ধীরে দেশের সকল প্রধান সড়ক ও সেতুতেই স্বয়ংক্রিয় টোল আদায়ের এই পদ্ধতি চালু করা হবে।"
তবে অতিরিক্ত ওজন থাকার কারণে ভারী যানবাহন ও কার্গোবাহী ট্রাকগুলোকে এখনও এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
'কম্পিউটার নেটওয়ার্কস লিমিটেড' নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তিন সেতুতে এই ডিভাইসগুলো স্থাপন করেছে। প্রযুক্তিটির ব্যবহার সম্ভব হলে মহাসড়কে টোল দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না যানবাহনগুলোকে।
এই সুবিধা পেতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের মালিকদের হিসাব থাকতে হবে ডাচ বাংলা ব্যাংকে অথবা রকেট মোবাইল অ্যাকাউন্টে। গাড়ির মালিকরা ব্যাংকে বা টোল প্লাজায় গিয়ে সরাসরি নিবন্ধন করাতে পারবেন। নিবন্ধনের পর তারা ইলেকট্রনিক টোল আদায়ের এই সুবিধা পাবেন।
টোল প্লাজায় গাড়ি পার হবার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর নিবন্ধন নম্বর আরএফআইডিতে চিহ্নিত হবে। গাড়ির ধরন অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত টোল তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে রাখা হবে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির মালিকের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে বিষয়টি তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কস লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে,খুব বেশি গাড়ি এই সুবিধা পেতে নিবন্ধন করছেন না।
মেঘনা সেতুর নয়টি লেনে মাত্র একটিতে এই সুবিধা রাখা হয়েছে। আর একটি লেন প্রস্তুত থাকলেও, পর্যাপ্ত চাহিদা নেই বলে তা চালু করা হয়নি বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কস সিস্টেমের প্রকৌশলী নয়ন বিশ্বাস বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাসই ৫ হাজার। তবু আমরা এখনও আশানুরূপ অংশগ্রহণ দেখতে পাচ্ছি না। আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ এখনও বিষয়টি সম্পর্কে জানে না।"
২৩ সেপ্টেম্বর মোট ১১৮টি গাড়ি ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিসে নিবন্ধন করেছে। প্রতিদিন এনা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ১২০টি বাস এই মেঘনা ও গোমতী সেতু দিয়েই চট্টগ্রাম, ফেনী এবং কক্সবাজারে যায়। গত চার মাসে কোম্পানির ৮০টি বাস এই সার্ভিসে নিবন্ধন করিয়েছে। বাকি বাসগুলোও নিবন্ধনের আওতায় আসবে বলে জানান কোম্পানির ব্যবস্থাপক আতিকুল আলম।
আতিকুল বলেন, "টোল কেটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে সময় অনেক কম লাগে বলে যাত্রীরাও খুব খুশি।"
কম্পিউটার নেটওয়ার্কস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল হাসান সরোয়ার জানান, "প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি গাড়ি নিবন্ধন করাচ্ছে। আশা করছি, সাধারণ মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে জানলে আরও বেশিসংখ্যক গাড়ি এই সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হবে।"