কোনো অপেক্ষা নয়, টিকা বাজারে আসামাত্র নেওয়া উচিত
শীত আসা মাত্র পৃথিবীর দেশে দেশে বেড়েছে মহামারি সৃষ্টির জন্য দায়ী কোভিড-১৯ সংক্রমণ। তবে এরমধ্যে আশার কথা গুনিয়েছে ভ্যাকসিন গবেষণায় জড়িত বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। মার্কিন কোম্পানি ফাইজার, মডের্না থেকে শুরু করে ব্রিটিশ সুইস মালিকানার অ্যাস্ট্রাজেনেকা সকলেই দিয়েছে শেষ ট্রায়ালে প্রত্যাশাতীত অগ্রগতির খবর।
টেক্সাস চিলড্রেনস হসপিটালের সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের সহকারী পরিচালক ডা. পিটার হোটেজ আশা করছেন, আগামী মাস তথা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচিত জনসংখ্যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকাদান শুরু হয়ে যাবে। তারপরই ধীরে ধীরে সকলকে টিকার আওতায় আনা হবে।
''আগামী বছরের প্রথম দিক নাগাদ এই কর্মসুচির গতি বাড়বে। ফলে ওই সময় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য শতাংশকে টিকা দিতে পারব, বলেই আমি মনে করি,'' তিনি বলছিলেন।
হোটেজ মনে করেন, বর্তমানে গবেষণাধীন প্রায় সকল টিকাই সমানভাবে কাজ করে। এগুলো মূলত করোনাভাইরাসের গায়ে কাঁটা সদৃশ যে আবরণ দেখা যায়, তার প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
তবে এতগুলো টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে যে সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কোন টিকাটি বেশি নিরাপদ। তিনি বলেন, প্রায়শ'ই আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কোন টিকা বাজারে আসার অপেক্ষা করছেন। জবাবে আমি সব-সময় একটা কথাই বলি। সেটা হলো, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অনুমোদিত যেকোনো টিকা বাজারে আসামাত্র আমি তা সানন্দে গ্রহণ করব।
এব্যাপারে হোটেজের পরামর্শ, ''বেশি ভাববেন না। দেরি করাটাও ঠিক নয়। ফলপ্রসূ যে টিকাটি বাজারে আসবে, তা দ্রুত গ্রহণ করাটাই হবে উচিৎ কাজ।''
গত দুই দশক ধরে হোটেজ ও তার সহকারী গবেষক দল বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য স্বল্পমূল্যে টিকা উৎপাদনের গবেষণা করছেন। বর্তমানে তারা কোভিড-১৯ প্রতিরোধেও এমন একটি টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় জড়িত। এর সুফল পাবে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। স্থানীয়ভাবে কম খরচে উৎপাদন করা গেলে টিকার জন্য তাদের ইউরোপ ও আমেরিকার মুখাপেক্ষী থাকার প্রয়োজন হবে না।
''ইতোমধ্যে ভারতের হায়দেরাবাদ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়োলজিক্যাল ই- এর সঙ্গে আমরা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। চুক্তি অনুসারে আমাদের গবেষণা সফল হলে প্রতিষ্ঠানটি ১২০ কোটি ডোজ উৎপাদন করবে। বর্তমানে ভারত জুড়ে টিকাটির ট্রায়াল চলছে। আমরা এর আগে কখনোই কোনো টিকার শতকোটি ডোজ উৎপাদন করিনি। তাই ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজনাও কাজ করছে,'' হোটেজ জানিয়েছেন।
তবে ভ্যাকসিন নিয়ে যত সফলতাই আসুক, ব্যাপক আকারে টিকাদান শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত সকল সবাইকে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করার আহবান জানান এ বিশেষজ্ঞ।
তার ভাষায়, ''এই শেষ মুহূর্তে এসে আর নতুন বিপর্যয় তৈরি করবেন না। দয়া করে, আসন্ন ছুটির সময় সতর্ক থাকুন। কয়েক মাসের মধ্যেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। শেষ সময়ে যদি নিজের অবহেলায় কোনো প্রিয়জনকে হারান, তাহলে সাড়া জীবন সেই ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে। তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে এই অপেক্ষা আমাদের সকলের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে।''
- সূত্র: এনপিআর