প্রায় মায়ের সমবয়সী! পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক শিশু
শিশুরা বিশুদ্ধতা আর নির্মলতার প্রতীক। তারা নতুনের আগমনী ধ্বনি, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার চাবিকাঠি লুকিয়ে থাকে শিশুর আগামীর পথচলায়।
কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্যের এক সদ্যজাত কিন্তু জন্ম নিয়েই নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।
কন্যা শিশুটিকে ভ্রূণ অবস্থাতেই জমাট রাখা হয়েছিল দীর্ঘ ২৮ বছর, সেই ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসে। এরপর তাকে ২৯ বছর বয়সী এক মার্কিন তরুণী টিনা গিভসনের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় চলতি বছরেই। গত ২৬ অক্টোবর তার গর্ভেই পূর্ণতা লাভ করে জন্ম নেয় শিশুটি।
ওর নাম রাখা হয়েছে মলি গিভসন।
এত পুরোনো ভ্রূণ এই প্রথম সফলভাবে মাতৃদেহে বেড়ে উঠে জন্মলাভ করলো। ফলে বিজ্ঞান জন্ম দিল আরেক বিস্ময়।
আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, জন্মদাত্রী টিনা জন্মেছিলেন মলিকে ভ্রূণ অবস্থায় সংরক্ষণ রাখায় মাত্র ১৮ মাস আগে। অর্থাৎ, প্রজন্মের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তারা দুজনেই পৃথিবীতে প্রায় একই পরিমাণ সময় কাটিয়েছেন।
নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিনা বলেন, ''এটি সহজে ভুলে থাকার মতো বিষয় নয়। কিন্তু, আমাদের কাছে মলি হলো ছোট্ট বিস্ময়কর সোনামণিটি।''
এই আশ্চর্য গল্পে হতবাক করে দেওয়ার মতো আরো অনেক তথ্যই আছে।
মলি জন্ম নিয়ে সবচেয়ে পুরোনো ভ্রূণ থেকে শিশু জন্মের রেকর্ডও ভাঙ্গে। এর আগে ২৪ বছর বয়সী এক ভ্রূণ থেকে ২০১৭ সালে এমা ওয়ারেন গিভসন নামের এক শিশুর জন্ম হয়। এমা আসলে মলির বড় বোন। অর্থাৎ, একই মা জন্ম দিয়েছেন সবচেয়ে বয়সী দুই শিশুকে! পৃথিবীর অন্য কোথাও আর এমন ঘটনার কথা জানা যায়নি।
এসব কথা উদ্ভট শোনালেও, বাস্তবের প্রয়োজনীয়তা গিভসন পরিবারকে এভাবে শিশু জন্মদানে বাধ্য করে। স্বামী-স্ত্রী'র একক পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই অনুর্বরতার কারণে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তারা দুটি জমাট ভ্রূণের কথা জানতে পারেন।
বাস্তবেও ভ্রূণ দুটি ছিল দুই বোন। মলি ও এমার প্রকৃত পিতামাতাই ওদের দান করেন নিঃসন্তান দম্পত্তিদের জন্য। এবং প্রায় একসঙ্গেই তাদের জমাট অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। তবে গোপনীয়তার শর্ত থাকায় প্রকৃত মাতা-পিতার নাম গোপন রাখা হয়েছে।
সেদিক থেকে দেখলে দুই বোনই আসলে পালিত কন্যা। কিন্তু, তারা পালক মা টিনার গর্ভে জন্ম নিয়েছে নতুন করে।
তাদের নিয়ে উচ্ছসিত টইনা বিবিসিকে বলেন, 'ওদের সঙ্গে খুশিতে আমরা এখন চাঁদের রাজ্যে বসবাস করছি।'
'পাঁচ বছর আগেও হয়তো আজ আমি এমন কাজ করব, তা ভাবতেও পারতাম না। কেউ বললে তাকে পাগল বলেই ডাকতাম। তাই মাঝে মাঝে আমি নিজেও যে বিস্মিত হইনা, তা কিন্তু নয়,' তিনি যোগ করেন।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট