জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাড়ছে রোগ-ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর ঘটনা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর পরিমাণ। জনস্বাস্থ্যের উপর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের যোগসূত্র নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত কিছু বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ এমন কথা জানায়।
ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বিজ্ঞানীরা এনিয়ে এক প্রাথমিক নিবন্ধে জানাচ্ছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে চলতি ২০২০ সালে সমাপ্ত দশক ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। এসময় লাখ লাখ মানুষ বিদ্ধংসী দাবানল, বন্যা আর চরম ক্ষরার মতো বিপর্যয়ের শিকার হন। সঙ্গে মহামারির তাণ্ডব যোগ করে দুর্ভোগের নতুন মাত্রা।
এনিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে অন্য একটি গবেষণা পর্যালোচনা। সেখানে ২০১৯ সালের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়; তাপ প্রবাহ, বায়ু দূষণ ও বৈরি আবহাওয়া মানবদেহে দিনে দিনে আরো বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলা শুরু করেছে। জলবায়ুর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যকে একসুতায় গাঁথা এটি বিস্তারিত বার্ষিক প্রতিবেদন।
প্রতিবছর প্রকাশিত এ প্রতিবেদন পরিবেশবাদীদের কাছেও বেশ সমাদৃত। নীতি-নির্ধারক মহলের কাছে পরিবেশ সহায়ক নীতি প্রণয়নের জন্য তারা প্রায়শই এখান থেকে তথ্য উল্লেখ করেন। সারা বিশ্বের প্রখ্যাত সব চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই হচ্ছেন এর লেখক।
দুটি প্রতিবেদনেই রোগ-ব্যাধি, মৃত্যু আর তার সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সুস্পষ্ট সম্পর্ক তুলে ধরা হয়।
ল্যানসেট বিশ্লেষণের লেখকরা বলেন, ''কার্বন নিঃসরণকে ভর্তুকি দেওয়ার মতো নীতি চর্চার মাধ্যমে উৎসাহিত করলে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ে। মান কমে যায় খাদ্য এবং আবাসিক বসতির। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন নানা প্রকার বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী।''
প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের তথ্য বিশ্লেষণ তুলে ধরেন ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেনি সালাস। তার মতে, জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারগুলোর উচিৎ জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা।
''মান্ধাতার আমলের জ্বালানি উৎসে বিনিয়োগ আমাদের বন্ধ করতেই হবে। এইখাতে অর্থায়ন করলে তাতে আসলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকেই ভর্তুকি দেওয়া হয়,'' তিনি বলছিলেন।
গত বুধবার দেওয়া এক ভাষণে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেজ নিজেও বিশ্বনেতাদের প্রতি জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানোর আহ্বান জানান।
এসময় মহাসচিব বলেন, ''মানবজাতি যেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। এই লড়াই আত্মঘাতি। বাঁচতে হলে প্রতিটি দেশ, নগর, আর্থিক ব্যবসা এনং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকেই ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য (তথা গ্রিনহাউজ গ্যাস) হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।''
গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালে লকডাউনের পরও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং আরো দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র তাপ প্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অনেক অঞ্চলে। এই তাপপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যের জন্য সর্বনাশা। বিশেষ করে, এতে বয়স্কদের মৃত্যু হার অনেক বেড়ে যায়।
গত ২০ বছরে তাপপ্রবাহের এই দৌরাত্মে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যু ৫০ শতাংশ! বেড়েছে বলে জানায় ল্যানসেটের প্রতিবেদন। আর সকল বয়সের মিলিয়ে ২০১৮ সালে দুই লাখ ৯৬ হাজার মানুষ তাপদাহের কারণে মারা যান।
সূত্র: এনপিআর