সাইকেলে চড়ে মৃত্যু উপত্যকা পাড়ি দিলেন ৭০ বছরের দাদিমা
বিশ্বের সবচাইতে ভয়ঙ্কর রাস্তাগুলোর একটি হল বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের সঙ্গে ইয়াঙ্গাস এলাকার সংযোগকারী ‘ইয়াঙ্গাস রোড’। ‘মুত্যু-উপত্যকা’ নামেই যার পরিচিতি। সাপের মতো পেঁচিয়ে উঠে গেছে ১১ হাজার ফুট উঁচুতে। নিম্নভূমিতে ঘন জঙ্গল। সেখান থেকে এটি উঠেছে ওপরে-- আন্দিজ পর্বতমালার বরফঢাকা চূড়ায়। কুয়াশা, বৃষ্টি, পাথুরে ধস আর খাড়া সব শৈলচূড়া এ পথের মূল আকর্ষণ। এই ভয়ঙ্কর সুন্দরের টানে বিভিন্ন সময়ে এখানে হারিয়ে গেছে হাজারো প্রাণ!
তাই বলে সত্তর বছর বয়সী ‘গ্র্যান্ডমা’ মার্থা মুনোজ এই ‘মৃত্যু-উপত্যকা’ চষে বেড়াবেন? বিষয়টা একটু আশ্চর্যজনকই বটে!
কিন্তু বলিভিয়ান এই দাদিমা সত্যিই সেখানে উঠেছেন। আর সেজন্য এখন তিনি মৃত্যু-উপত্যকার চূড়ায় আরোহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির স্বীকৃতি পেয়েছেন।
যেনতেনভাবে কিন্তু সেখানে ওঠেননি মুনোজ। বলিভিয়ার সবচাইতে ভয়ানক এক প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত হয়েছে ওই মৃত্যু-উপত্যকায় ওঠার সাইকেল রেইসটি। ৬০ কিলোমিটারের (৩৭ মাইল) পথের সাইকেল রেইসটির নাম ‘স্কাই রেইস’। এটিতে অন্যান্যদের সঙ্গে অংশ নিয়ে মৃত্যু-উপত্যকায় চড়েছেন মুনোজ। শনিবার (৫ অক্টোবর) নিতান্ত শখের বশেই সাইকেলে চড়ে পথটুকু পাড়ি দিয়ে এলেন তিনি।
কিন্তু এই বয়সে সাইক্লিংএর মতো শখ কেন বেছে নিলেন তিনি?
ছেলের মৃত্যুর পর একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন মার্থা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এক পারিবারিক বন্ধুই এরপর পরামর্শ দিলেন সাইকেল চালাতে।
মার্থা জানান, “ও আমাকে বলে… সাইকেল আমাকে এই শোক থেকে বের হতে সাহায্য করবে, নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর প্রেরণা যোগাবে।”
প্রতিযোগিতা শেষে রয়টার্সকে তিনি জানান, “পথটা রীতিমতো খাড়া উঠে গেছে, কোনো খাঁজ নেই। আপনাকে শুধু উঠে যেতে হবে, কোথাও থামার সুযোগ নেই।”
এই প্রতিযোগিতার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুনোজ নিজেই। জানালেন, ছয় নাতি-নাতনির সঙ্গে সাইক্লিং করতে ভালো লাগে তাঁর। ওদের সঙ্গে ছোটখাটো পথে সাইকেল চালাতে চলে যান প্রায়ই। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনের বয়স এখন আঠারো। দাদির মতো সাইক্লিং করতে ভালোবাসে সে-ও।
মুনেজের আশা, তাঁর এই নাতিও একদিন তাঁর পথেই অগ্রসর হবেন। সাইকেলে চড়ে পাড়ি দেবেন দেশ-দেশান্তর।