লেবু চাষে লাভবান ধামরাইয়ের কৃষক
স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় লেবু চাষে ঝুঁকছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কৃষকেরা। অনূকুল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় এখানে লেবুর ফলনও ভালো। রাজধানীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে পাইকারদের নিকটও চাহিদা রয়েছে ধামরাইয়ের লেবুর।
ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার বালিয়া, আমতা, বাইশাকান্দা, চৌহাটসহ ৮টি ইউনিয়নের মোট ৭৫২ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষাবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। যার উৎপাদণ লক্ষমাত্রা প্রায় ৮ হাজার মেট্টিক টন। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর কাওরানবাজার, শ্যামবাজার ও যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের চাহিদা পূরণ করছে ধামরাইয়ের লেবু।
চাষাবাদ ব্যয়
এক একর লেবু চাষের জন্য জমি তৈরি, চারা বপন এবং সার, কিটনাশক ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কৃষকের বাৎসরিক ব্যয় হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। দুই বছর বয়স থেকে লেবু গাছ ফলন দেওয়া শুরু করে। এক নাগারে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ওই গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায় অনায়াসে।
ফলন সংগ্রহ
গড় হিসেব অনুযায়ী একটি জমি থেকে বছরে ৮ বার ফলন সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বারে এক একর জমি থেকে ২০ হাজার পিচ লেবু সংগ্রহ করা যায় অনায়াসে। যার বাৎসরিক হিসেব দাঁড়ায় এক লাখ ৬০ হাজার পিচ। বর্তমান বাজারদরে প্রতি পিচ লেবুর পাইকারি বাজারদর রয়েছে চার টাকা। সেই হিসেবে এক একর জমি থেকে বছরে বিক্রি হয় ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার লেবু।
লেবু বিক্রি
তিনটি পদ্ধতিতে লেবু বিক্রি করেন ধামরাই উপজেলার কৃষকরো। প্রথমত, লেবু গাছের চারাগুলোতে ফলন দেওয়া শুরু হলে প্রতি একর জমির লেবু বাৎসরিক হিসেবে এক থেকে সোয়া লাখ টাকায় পাইকারদের নিকট বিক্রি করা যায়। দ্বিতীয়ত, অনেক কৃষক আবার নিজেরাই চাষাবাদ করে নিজেদের লেবুগুলো রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি করেন। তৃতীয়ত, লেবু বিক্রির মৌসুমে উপজেলার ওই ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একাদিক হাট রয়েছে। যেখান থেকে পাইকারেরা লেবু ক্রয় করে রাজধানীর বাজারগুলোতে নিয়ে যান।
কৃষকের বক্তব্য
ধামরাই উপজেলার বালিয়া পূর্বপাড়া এলাকায় আলাপ হয় সোহেল রানা নামে এক যুবকের সাথে। ২০১২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন তিনি। চাহিদা মোতাবেক চাকুরি না মেলায় যুক্ত হয়েছেন লেবু চাষে। চলতি মৌসুমে ৯ একর জমিতে লেবুর আবাদ করেছেন তিনি। বন্যায় লেবুর জমিতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তারপরও লেবুর বাজারদর স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছরে জমি চাষাবদের সব খরচ বাদেও ৯ একর জমি থেকে কমপক্ষে ১৩ লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের টেটাইল এলাকার আব্দুর রহিম নামের এক কৃষক বলেন, চলতি মৌসুমে নিজের চার একর জমিতে লেবুর বাগান করেছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে বাৎসরিক হিসেবে আরও ৫ একর জমির লেবু বাগান ৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে লেবুর বাজারদর ভালো থাকায় সব মিলিয়ে খরচের দ্বীগুন মুনাফা হওয়ার আশাবদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আব্দুল হালিম নামে বাইশাকান্দা এলাকার এক কৃষক বলেন, দুই বছর লেবু বাগান থেকে লেবুর ফলন না পেলেও ওই সময়ে লেবু বাগানে সবজির চাষাবাদ করা যায়। এতে করে লেবুর চারা বপনের খরচ উঠে যায়। এরপর লেবুর ফলন দেওয়া শুরু হলে এক একর জমি এক থেকে সোয়া লাখ টাকায় পাইকারদের নিকট বিক্রি করা যায়। তখন আর কোন খরচ নেই। বাৎসরিক ওই মুনাফা পাওয়া যায়। জমির লেবু বাগানের দেখবালের দায়িত্ব থাকে পাইকারদের নিকট। এতে করে স্থানীয় কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাইকারদের বক্তব্য
আকমল হোসেন নামের এক পাইকার বলেন, রাজধানীর পাইকারি আড়তে ধামরাইয়ের লেবুর চাহিদা বেশি। যে কারণে বালিয়া, বাইশাকান্দা, এবং আমতা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে লেবু ক্রয় করেন তিনি। প্রতিদিনই এসব এলাকা থেকে কয়েকটি করে লেবু বোঝাই ট্রাক রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে যায়। যে কারণে লেবু কেনার পরে পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয় না। এক খাচি মাঝারি মানের লেবু স্থানীয় বাজার থেকে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকায় ক্রয় করা যায়। যা কিনা পাইকারি বাজারে বিক্রি করা যায় ২৬ থেকে ২৭ হাজার হাজার টাকায়। প্রতি খাচিতে আনুমানিক ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার লেবু থাকে। তবে নিন্মমানের লেবুর বাজারদর আরও কম যায় বলে জানান তিনি।
আমজাদ বেপারী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বালিয়া ও আমতা থেকে লেবু ক্রয় করে ঢাকার বাজারে বিক্রির সাথে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত রয়েছেন। এসব এলাকার কৃষকেরা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় লেবু সংগ্রহ করে তা একটি পলি কাগজের উপর মেলে রাখেন। সেখানে লেবুর ধরণ অনুযায়ী বাজারদর নির্ণয় করেন পাইকারেরা। স্থানীয় কৃষকেরা তাদের পরিচিত হওয়ায় বাকীতে লেবু ক্রয় করা যায়। অর্থ্যাৎ লেবু ক্রয় করার পরে রাজধানীর বাজারে সেই লেবু বিক্রি করে টাকা পরিশোদের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, অল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ার একটি মাধ্যম হচ্ছে লেবু চাষ। লেবু বাগান করার পর ফলন পাওয়া মাত্রই বাগানের লেবু বিক্রি করে দেওয়া যায়। যে কারণে লেবু চাষে আগ্রহী কৃষকেরা। উপজেরার প্রায় দুই হাজার কৃষক লেবু চাষে লাভবান বলেও জানান তিনি।