১৯৪৮ সালের বাংলাদেশ: পুরনো ভিডিওটি যেভাবে রঙিন হলো
ইউটিউব ঘুরতে ঘুরতে হোমপেজে একটা ভিডিও দেখতে পেলাম, যার টাইটেল ছিল, '[4k, 60 fps] A Trip Through New York City in 1911.' ভিডিওটাতে চোখ আটকে গেল!
প্রথমত এটি ১৯১১ সালের ভিডিও! যেটি কি না অবশ্যই ফিল্মরোলে করা, সেই ভিডিও দেখছি একদম রঙিন এবং পরিষ্কার, যেন এই যুগে ভিডিও করা। তখন নিজেরই একটা প্রজেক্ট নিতে ইচ্ছা জাগল, আমিও বাংলাদেশের পুরাতন একটি ভিডিও এমন কালার করব, আরও পরিষ্কার করব!
ক্লিপ খুঁজতে লেগে গেলাম। এটি মোটেও সহজ কাজ ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আর্কাইভ থেকে পেয়ে গেলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ভিডিও, যেটি ১৯৪৮ সালের!
ভিডিওটাতে দেখা যায়, মানুষ ধুতি, পাজামা- এসব পোশাক পরে ঘোরাফেরা করছে, বাসে যাচ্ছে, রিকশা, সাইকেল চালাচ্ছে, ঘোড়ার গাড়িতে যাচ্ছে, পাট শুকাচ্ছে, বিক্রি করছে। এরপর একটু ঘাটাঘাটি করে পেয়ে যাই একটি ডিপ লার্নিং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (Deep Learning Artificial Intelligence)। এখানে শুধু কমান্ড দিলেই কম্পিউটার প্রাচীন রেফারেন্সের অনুযায়ী আপনা-আপনি ভিডিও কালার করে।
এরপর ভিডিওটিকে আবার অনেকগুলো ফ্রেমে ভেঙে গিগাপিক্সেল এআই (Gigapixel AI) সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ক্লিপটাকে ১৪৪পি রেজুলুশন থেকে ফোর-কে রেজুলুশনে নিয়ে যাই।
ভিডিওটি ছিল ১৫এফপিএস-এর (ফ্রেম পার সেকেন্ড), যার কারণে ভিডিও কেমন যেন ধীরগতির মনে হতো। ১৫এফপিএস থাকে সাধারণত দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন ভিডিওতে। তবে বাস্তব ভিডিওতে এই ফ্রেমরেট বেমানান লাগে। তাই খুঁজতে খুঁজতে আরেকটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পেয়ে যাই, যা ভিডিওটিকে ৬০এফপিএস-এ রূপান্তর করে।
এই পর্যায়ে এসে ভিডিওটি দেখে নিজেরই ভালো লাগছিল! কত সুন্দর ছিল বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)!
ভিডিওটিতে কোনো কথা বা আওয়াজ ছিল না; ছিল শুধুই একটি মিউজিক। থ্রিডি সারাউন্ড সাউন্ড যোগ করলাম এডোবি প্রিমিয়ার প্রো (Adobe Premier Pro) ব্যবহার করে। পুরাতন সেই ট্রাক ও বাসের শব্দ, জনসমাগমের শব্দ, ঘোড়ার গাড়ির শব্দ, স্ট্রিমারের শব্দ, পাখির শব্দ, সাইকেল ও রিকশার কলিংবেলের শব্দ।
সবকিছু যোগ করার পর যেন মনে হচ্ছিল, ভিডিওটিতে প্রাণ চলে এসেছে। এগুলো করে সর্বশেষ ভিডিও পেতে সময় লেগেছিল তিনদিনের মত।
যেহেতু একটি কমদামি কম্পিউটার আমার, তাই এসব শেষ হতে এত সময় লাগা। সবকিছু শেষে নিজের কাজের একটি ছাপ বসিয়ে ভিডিওটি ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে আপলোড দিই। সবার এটি পছন্দ হয়ে যায়, তা তাদের সাড়া ও পোস্ট শেয়ার করা প্রমাণ করে দিচ্ছিল! সবার ভালো লাগা দেখে কষ্টটুকু সার্থক মনে হচ্ছিল।
ভবিষ্যতে আরও এমন কাজ করতে চাই।