৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সাল নাগাদ ৮.৫১% প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা
১৯৭৩ সালে প্রণীত দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ভূমিকায় সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের সামনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার এ বিনিয়োগ পরিকল্পনায় পরের পাঁচ বছরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মুক্তিযুদ্ধ পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে খাদ্য ও চিকিৎসার মৌলিক চাহিদা পূরণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও অবকাঠামো পুনরুদ্ধারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।
৪৭ বছর পর এসে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর পরিকল্পনায় আগামী ৫ বছরে দেশি-বিদেশি উভয় খাতে মোট ৬৪ দশমিক ৯৬ ট্রিলিয়ন টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে এ পরিকল্পনা।
এ বিনিয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনার শেষ বছর ২০২৫ সালে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগের ৮৯ শতাংশই প্রাক্কালন করা হয়েছিল সরকারি তহবিল থেকে। আর অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২০২৫) বিনিয়োগের ৮১ শতাংশই প্রাক্কালন করা হবে বেসরকারি খাত থেকে।
পরিকল্পনার আগামী ৫ বছরের দেশীয় খাতে বিনিয়োগের ৫২.৬৬ ট্রিলিয়ন টাকাই আসবে বেসরকারি খাত থেকে। বাকি ১৯ শতাংশ বা ১২.৩০ ট্রিলিয়ন টাকা আসবে সরকারি খাত থেকে। ৮.০৯ ট্রিলিয়ন টাকা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগের হার ৩৬ দশমিক ৯৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৩১.৭৫ শাতাংশ।
একই সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ দশপমিক ৬৩ শতাংশ থেকে ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার। যদিও গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ ২২-২৩ শতাংশে আটকে আছে।
পরিকল্পনাটি প্রনয়নের সঙ্গে জড়িত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে বেসরকারি খাতকেই অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা সহজীকরণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি আর নেই। গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে পরিবহন অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতাও দূর হবে।
শামসুল আলম জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও অন্তত ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করা হবে। পরিকল্পনায় তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া, আইসিটি, যন্ত্রপাতি ও হালকা প্রকৌশল, মোটর সাইকেল, কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো বেশ কিছু সম্ভাবনাময় খাতকে বিকাশের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে ব্যবসা পরিবেশের উন্নতি না হলে আগের মতোই বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যাক্তারা।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনার অভাবে বেসরকারি খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্য কখনই পূরণ হয় না। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। এই ব্যর্থতা থেকে নেয়া শিক্ষা নতুন পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে হবে।
স্বাস্থ্য ও ব্যবসায় কোভিডের প্রভাব মোকাবেলার বিস্তারিত তথ্য নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইবরাহিম বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সংস্কারের উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামোর প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের অনুপাত বর্তমান ১২ শতাংশ। এটি অন্তত ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।