বুয়েটে শিক্ষার্থীদের গণশপথ
সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দেবার শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের পর মাঠের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ইতি টেনেছেন তারা।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বুয়েট মিলনায়নের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী গণশপথে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট ও কয়েকজন শিক্ষকও ছিলেন।
বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিয়া রিজওয়ানা সবাইকে শপথ করান। তাদের শপথে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান সম্মিলিতভাবে রুখে দেবেন তারা। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সমূলে উৎপাটন করা হবে।
একই সঙ্গে সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকারও শপথ নেন সবাই।
এর আগে গত মঙ্গলবার আবরারের হত্যাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত তারা শিক্ষাসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ দাবি মেনে নেওয়ায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে বুয়েট শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
সেই সঙ্গে তারা খুনিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
সেখানেই শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বুধবার ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের অপরাধ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণশপথ কর্মসূচি পালন করবেন।
প্রসঙ্গত, বুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিলে তারা সোমবারের ভর্তিপরীক্ষার জন্য রবি ও সোমবার তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখেন।
১২ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত পাঁচ নোটিশে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবাসিক হলের অবৈধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বুয়েট। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানাতে পারেন সে জন্য ওয়েবসাইট চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বুয়েট কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পরই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। মামলা পরিচালনার ব্যয় বহন ও হলগুলোর প্রতিটি তলায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রতিশ্রুতিও দেয় কর্তৃপক্ষ।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ৬ অক্টোবর রাতে শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চকবাজার থানায় মামলা করেন। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত ১৬ আসামিসহ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।