সেরামের ভ্যাকসিন পেতে ৫০% অগ্রিম পরিশোধ করবে সরকার
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আনতে দুই-একদিনের মধ্যে ব্যাংক গ্যারান্টির ৫০% বা ৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সিরাম ইনস্টিটিউটকে দেবে বাংলাদেশ। এরপর ভ্যাকসিন পাওয়ার পর আরো ৫০% অর্থ পরিশোধ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বেক্সিমকো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, শিগগিরই সিরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাকাউন্টে ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ পরিশোধের পরিকল্পনা আছে।
একই কথা বলেন বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সিরাম ইনস্টিটিউট ব্যাংক গ্যারান্টির কাগজ বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চুক্তি অনুযায়ী মোট ক্রয়কৃত মূল্যের ৫০% অর্থ রোববার বা সোমবার জমা দিবে। ভ্যাকসিন আনার আগে বাকী ৫০% অর্থ পরিশোধ করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট এ ভ্যাকসিন দিতে না পারলে বাংলাদেশ অগ্রিম এই টাকা ফেরত নেবে।
গত পাঁচ নভেম্বর বাংলাদেশ সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের তৈরীকৃত ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম ছয় মাসে, সিরাম বেক্সিমকোর মাধ্যমে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ করবে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে টীকাদান সম্প্রসারিত কর্মসূচীর আওতায় যেসব ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে, সবকটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচও এর অনুমোদনের আগে ব্যবহার করা হবে কিনা জানতে চাইলে এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ডব্লিউএইচও এর অনুমোদন ছাড়াই পৃথিবীর অনেক দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কোন একটি অনুমোদন দিলে আমাদের দেশে সেই ভ্যাকসিন ব্যবহারের কোন সমস্যা নেই। তবে আমাদের দেশে ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগবে।
এ বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেশে আসবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, "ভ্যাকসিনেশনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে। এ সপ্তাহের মধ্যে ফিল্ডের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো তালিকা তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ করে সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকা এখনো প্রস্তুত হয়নি।"
ভ্যাকসিন প্রার্থীদের তালিকা তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস ডিপার্টমেন্ট, এটুআই ও সুরক্ষা কর্মসূচী কাজ করছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাজ্যের পর শুক্রবার ভারতের এক্সপার্ট প্যানেলও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। শনিবার ভারতের ১১৬ জেলার ২৫৯ কেন্দ্রে ভ্যাকসিনেশনের 'ড্রাই রান' হয়েছে।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়েছে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ।
রাব্বুর রেজা বলেন, " সোমবারের মধ্যে ভারতের ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেবে। ভারতের অনুমোদনের সেই চিঠি আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেবো, যাতে তাড়াতাড়ি অনুমতিপত্র পাওয়া যায়। তবে জানুয়ারির শেষে ভ্যাকসিন দেশে আসতে পারে, ততোদিনে ডব্লিউএইচও এর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আনার পর বেক্সিমকো নিজেদের কোল্ড চেইনে তা সংগ্রহ করবে। পরবর্তীতে কোম্পানিটি রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ঔষধের গুদামগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। সরকারের ইপিআই কর্মসূচীর মাধ্যমে টিকাদান সম্পন্ন করা হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মহাপরিচালকের মুখপাত্র আয়ুব হোসেন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান,"যুক্তরাজ্য ও ভারতে যেহেতু অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাই আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটিও এখন আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী এ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে অনুমোদনের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ অনুসারে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।"