মার্কিন পার্লামেন্টে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় বিশ্ব নেতাদের নিন্দা
মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভের ঘটনায় বিশ্বনেতারা নিন্দা জানিয়েছেন; সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র।
বুধবার দুপুরের পর মার্কিন আইনপ্রণেতারা ৩ নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনের জয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য অধিবেশন ডাকে, তখনই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক আইনসভা কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে। হামলায় এখন পর্যন্ত একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, এর আগে দিনের শুরুতেই হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ''আমেরিকা বাঁচাও'' নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কংগ্রেস ভবনে হামলাকে 'অসম্মানজনক দৃশ্যের' অবতারণা বলে নিন্দা জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেন, "বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের পাশে দাঁড়ায়। এখন দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতার হস্তান্তর হওয়াটা জরুরি।"
অন্যান্য ব্রিটিশ রাজনীতিবিদেরাও ট্রাম্প-সমর্থকদের সহিংসতার সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার বলেছেন, এটি 'গণতন্ত্রের ওপর প্রত্যক্ষ হামলা'। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা ড্রায়ানও একইভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এটি গণতন্ত্রের ওপর বড় হামলা।'
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেন ক্যাপিটল হিলের সহিংসতার ঘটনায় টুইট করে লেখেন, 'পুরোপুরি ভয়াবহ'।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, '"মার্কিন গণতন্ত্রের শক্তিশালী অবস্থার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন।"
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, "ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।"
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, বাইডেনের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করবে, সে বিষয়ে তিনি আস্থাবান। অন্যদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষা করছেন।
উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।
গণতন্ত্রের ওপর হামলার ঘটনায় কানাডাবাসী অত্যন্ত অস্বস্তি ও দুঃখবোধ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো টুইটারে লিখেন, "সহিসংতা কখনো জনগণের ইচ্ছার ওপর জয়ী হবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্র অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। আর এটা হবেই।"
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন টুইটে লিখেছেন, " গণতন্ত্র- মানুষের ভোট প্রয়োগের অধিকার, তাদের মত প্রকাশের অধিকার, শান্তিপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার- একে উত্তেজিত জনতার মাধ্যমে খর্ব করা কখনো উচিত হবে না।"
হামলার নিন্দা জানান অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। তিনি জানান, এটি একটি বিরক্তিকর দৃশ্য। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানান।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।
একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা "গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের" নিন্দা জানিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যার সাথে ট্রাম্পের পূর্বতন সুসম্পর্ক আছে বলে বিবেচনা করা হয়, জানিয়েছেন যে, দাঙ্গা এবং সহিংসতার ঘটনায় তিনি ব্যথিত হয়েছেন।
টুইটে তিনি লিখেন, "নিয়মানুযায়ী এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। বেআইনী প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পরাভূত হতে দেয়া যাবে না।"
এশিয়ার আরেক দেশ জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ক্যাটসুনোবু কাটোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর' প্রত্যাশা করেছেন।
ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা, যিনি নিজেও ২০০৬ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছিলেন, এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিঙ্গাপুরের ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী তিও চি হেন একে 'বিষাদের দিন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী শহর ওয়াশিংটনে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই কারফিউ কার্যকর থাকবে।