নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ওয়াল স্ট্রিট
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ও নতুন বিনিয়োগে লাভের আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এবছর শেয়ার মূল্যও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই করোনা মহামারি এবং নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির চাকা ধসের মুখে ছিল।
বাজার মূল্যের বিকল্প বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওরাটসের ডেটাবেজ অনুযায়ী গত মৌসুমে শেয়ারের বড় লাভের খাতগুলোতে লাভের সম্ভাবনা ছিল মাত্র ২৪ শতাংশ। স্বাভাবিক অবস্থায় এই হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সিটিগ্রুপের ইউএস ইকোনমিক সারপ্রাইজ সূচক অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে না পারলেও শেয়ার বাজারের মূল্য ছিল ঊর্ধ্বগামী।
বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে ধারণা করছেন। এই সপ্তাহে জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনের পর ডেমোক্রেটদের সিনেট দখল শেয়ার বাজারে এনেছে স্বস্তি। বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন বছরে ট্যাক্স বৃদ্ধির পাশপাশি বাড়তে চলেছে বিনিয়োগ।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস বাইডেনের বিজয় ঘোষণা করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিক্ষুব্ধ সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। তবে শেয়ার বাজারে ঘটনাটি তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
নিউ ইয়র্কের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আইএনজির প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ জেমস নাইটলির মতে, রাজনীতির চাইতেও এখন কোভিড পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ওপর নজর দেওয়া উচিত।
শুক্রবার শেয়ার বাজার দুর্বল অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। যদিও বিদ্যমান তথ্যানুযায়ী, করোনার সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধির পাওয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো কর্মসংস্থানের সংকোচন ঘটেছে।
আগামী সপ্তাহে মুদ্রাস্ফীতি, খুচরা বিক্রয় এবং ভোক্তা সংবেদন সূচকের চিত্র প্রকাশিত হলে বিনিয়োগকারীরা তার উপর নজর রাখবে।
জেপি মরগান, সিটিগ্রুপ এবং ওয়েলস ফারগো আগামী ১৫ জানুয়ারি চতুর্থ ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশ করবে। এস এন্ড পির তালিকাভুক্ত প্রথম ৫০০টি প্রতিষ্ঠানও তাদের করোনাকালীন সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা টেকসই বিনিয়োগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে মহামারির তুলনায় নতুন নতুন বছরে আয় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী মোহান্নাদ আমা'র মতে, "অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় যাচাই-বাছাই করে বিচক্ষণতার সাথে বিনিয়োগ করবেন।"
গত বছর সবথেকে খারাপ সময় গেছে শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে। মোহান্নাদ আমা'র পরিকল্পনায় এবছর শক্তি খাত শীর্ষে থাকবে। ডেটা রেকর্ডকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভের মতে এ বছর শক্তি খাতে আয় ৬৬৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
শিল্প কারখানা, বিলাসবহুল পণ্য ও সেবা এবং কাঁচামাল থেকে আয়ের হার এবার প্রযুক্তি খাতকেও ছাড়িয়ে যাবে, এমনটাই উঠে এসেছে এসব তথ্যে।
২০২০ সালে বিটকয়েন, কপার, বন্ডের মতো অনিয়মিত ক্ষেত্রগুলো লাভের মূল উৎসে পরিণত হয়েছিল। এবছর পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
তবে ভ্যাকসিন আসতে দেরী করলে বিনিয়োগকারীরা গত বছরের বিশ্বস্ত বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলোতেও ফিরে যেতে পারেন।
২০২০ সালের বছর জুড়েই বাজারের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো লাভের চেয়ে আর্থিক উদ্দীপনা আর ভ্যাকসিনের আগমন নিয়েই চিন্তিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন এমএফএস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিশ্লেষক রবার্ট আলমিডা। তবে এবার বাজার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার প্রতি মনোযোগী হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।