সাপের চলাচলের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, ব্রাউন ট্রি নামের এক প্রজাতির সাপ দড়ির মতো দলা পাকিয়ে সিলিন্ডার সদৃশ বস্তুর গা বেয়ে উঠতে পারে, এ পদ্ধতি 'ল্যাসোনিং' নামে পরিচিত। সরীসৃপদের চলাচলের এধরনের সক্ষমতা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটির বিশেষজ্ঞরা অন্য একটি প্রকল্পে কাজ করার সময় নতুন এ তথ্যের সন্ধান পান।
১৯৪০-৫০'র দশকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্রাউন ট্রি সাপ ছড়িয়ে পড়ে, সেসময় থেকেই সাপটির আক্রমণে গুয়াম দ্বীপের বন্যপাখির প্রজাতির সংখ্যা কমে আসতে শুরু করে।
৩ ফুট উচ্চতার একধরণের বিশেষ লৌহদন্ডের সাহায্যে সাপগুলো যাতে গাছের ওপর পাখির বাসায় না পৌঁছাতে পারে, এমন নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনি কাজ করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য ভিডিও ক্যামেরাও স্থাপন করেন তারা।
সাপ সাধারণত একধরনের সরলরৈখিক পদ্ধতিতে পার্শ্বীয় দোলনের মাধ্যমে চলাচল করে। খারা ও মসৃণ পৃষ্ঠ বেয়ে উপরে ওঠার সময় অন্তত দুই জায়গায় ভর করে দেহের নাড়াচাড়ার মাধ্যমে ওপরে উঠে।
তবে বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করেন, সাপটি ৮ ইঞ্চি ব্যাসের দলা পাকিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি পার করে বেয়ে বেয়ে পাখির বাসায় পৌঁছে যায়।
'ল্যাসোনিং' পদ্ধতির মাধ্যমে এ প্রজাতির সাপগুলো একটি মাত্র বাঁকের মাধ্যমে একটি জায়গায় ভর দিয়েই ধীরে ধীরে উপরে উঠে যেতে পারে।
গবেষণাটির সহ-লেখক কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির থমাস সেইবার্ট বলেন, "আমরা ভাবতে পারিনি সাপগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনি পার করে উঠে যেতে পারবে। প্রাথমিকভাবে, সাপগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে উঠতে পারছিল না,"
"তবে চার ঘন্টা পরই হঠাত দেখতে পাই, সাপগুলো দলা পাকিয়ে নিজের দেহকে উপরের দিকে ঠেকে দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। আমরা ভিডিওর এই অংশটিই টানা ১৫ বার দেখেছি। আমরা এপর্যন্ত যা দেখেছি, কোনো কিছুর সাথেই এর তুলনা হয়না।"
গবেষকরা বলছেন সরীসৃপের জন্য এ ধরনের চলাচল খুব একটা সহজ নয়। তারা ধীরে চলাফেরা করে, বিশ্রামের জন্য থামে এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এছাড়া চলতে গিয়ে প্রায় সময় ফসকেও যায়।
সরীসৃপরা এভাবে চলাফেরা করতে পারলেও এ ধরনের চলাচল তাদের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেন গবেষণাটির সিনিয়র সহ লেখক ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটির ব্রুস জেইন।
তবে কঠিন হলেও এই প্রক্রিয়ায় চলাফেরার মাধ্যমে সরীসৃপ তাদের অসতর্ক শিকারকে আক্রমণ করতে পারে। সাপ কীভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়, সেই ব্যখ্যাও এর মাধ্যমে পাওয়া যায়।
ব্রাউন ট্রি সাপ কোথায় উঠতে পারে এবং কোথায় উঠতে পারে না তা নির্ণয় করার মাধ্যমে সহজেই ভয়ংকর এই প্রজাতির আক্রমণ থেকে বাঁচার প্রতিরোধক নির্মাণ করা সম্ভব।
গবেষকরা বলছে তারা এই নতুন উদ্ভাবনকে স্থানীয় পাখিদের রক্ষার কাজে ব্যবহার করতে চান।
সেইবার্ট বলেন, "আমরা গুয়াম দ্বীপের পাখিদের বাসস্থান রক্ষা ও পুনর্বাসনের জন্য এখন নতুন ধারার প্রতিরোধক তৈরি করতে পারব।" গত সোমবার 'কারেন্ট বায়োলজি' সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।
- সূত্র: সিএনএন