স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে
অবশেষে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আবেদনকারীদের হাতে ডিজিটাল এই কার্ড তুলে দিতে অনেকটাই প্রস্তুত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
বিআরটিএ'র মুখপাত্র মাহবুব-এ-রাব্বানী জানান, এই প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টারের একজন প্রযুক্তি কর্মী গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন এবং প্রিন্টার ও ডেটা সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও দুজন ইঞ্জিনিয়ার তার সঙ্গে যোগ দেবেন জানিয়ে রাব্বানী বলেন, যন্ত্রপাতি স্থাপন শেষে স্মার্ট ড্রাইভিং কার্ড প্রিন্ট করার আগে তারা এই প্রকল্পের সফটওয়্যারের ওপর কাজ করবেন।
টেন্ডার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে লাইসেন্স প্রদানের এই প্রকল্পের কাজ থেমে ছিল প্রায় দুই বছর।
এ বিষয়ে বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা এখন শেষ ধাপে আছি এবং আশা করছি, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রিন্টিং এর কাজ জানুয়ারির শেষভাগেই শুরু হবে।
তিনি জানান, প্রিন্টিং মেশিন, ডেটা সেন্টারসহ প্রকল্পের ৮০ শতাংশ যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে এবং বাকীগুলোও শীঘ্রই পৌঁছে যাবে।
বিআরটিএ'র তথ্য অনুযায়ী, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সংখ্যা প্রতিদিন ২০০০ করে বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ১৯ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যা ৬ লাখ ছিল।
স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্প নিয়ে অচলাবস্থার শুরু হয় ২০১৮ সালে। সেবার এই প্রকল্পের কন্ট্রাক্টর টাইগার আইটিকে বিশ্ব ব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করলে বিআরটিএ কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়।
২০২২ সালের মধ্যে ১৫ লাখ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির শর্তে বিআরটিএ টাইগার আইটির সঙ্গে এই চুক্তিটি করেছিল ২০১৬ সালে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় ২০১৮ সালের মধ্যেই অধিকাংশ কার্ড প্রিন্ট এবং বন্টনের কথা ছিল।
টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর নতুন ঠিকাদারের সন্ধানে নামে বিআরটিএ। ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টারকে খুঁজে পেতে বিআরটিএ'র সময় লেগে যার দেড় বছর।
স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড উৎপাদনের জন্য বিআরটিএ ফের টেন্ডার উন্মুক্ত করে ২০১৯ সালের ১০ জুন। এরপর তা চার দফায় সংশোধন করা হয় ২১ জুলাই, ২৮ জুলাই, ৮ আগস্ট এবং ২৮ আগস্ট। এরপর ওই বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ফের গত বছরের ২০ জানুয়ারি টেন্ডার উন্মুক্ত করে বিআরটিএ।
ওই টেন্ডারে সবচেয়ে কমমূল্যে দাম হাকায় ফরাসী কোম্পানি এসইএলপি, কিন্তু তাদের আবেদনপত্রে বেশ কয়েকটি ভুল ধরিয়ে দেয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার। এর ফলে ওই টেন্ডারটিও বাতিল হয়ে যায়।
এরপর গত বছরের ২৯ জুলাই উন্মুক্ত করা এক টেন্ডারে সর্বনিন্ম দাম হাঁকায় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার এবং কাজটি ভারতীয় এই কোম্পানিটিই পায়। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এই চুক্তিতে আসে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিআরটিএ'র একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আবেদনকারীদের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে বিআরটিএ বর্তমানে প্রতিমাসে ১০০ জনকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার স্বাভাবিক কর্মঘন্টা হিসেবে দৈনিক ৮ হাজার কার্ড প্রিন্ট করতে পারবে। তবে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারা আরও বেশি সময় কাজ করবে।
মাহবুব-এ-রাব্বানী বলেন, "বিআরটিএ আগে বলেছিল, স্মার্ট লাইসেন্স নিয়ে চলমান সমস্যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু আমরা মনে করি এটা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াতে পারে।"
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম চালানে ২০ হাজার কার্ড দেওয়ার কথা ছিল মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টারের কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি বেনাপোল বন্দরে 'অজ্ঞাত কারণে' আটকে থাকায়।
তিনি বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বিআরটিএ'র কাছে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার একটি ডেটা সেন্টার এবং সার্ভার স্থাপন করবে এবং সব ধরণের সেবা দেবে। এরমধ্যে রয়েছে অনলাইন এবং নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি, ডেটা সেন্টার, সার্ভার এবং স্টোরেজ মেইন্টেইন্যান্স এবং আবেদনকারীদের এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো তাদের কার্ড প্রস্তুত হয়েছে কিনা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঢাকার মিরপুর ১২ নম্বরে ১৫ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি অফিসে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার তাদের সার্ভার স্থাপন করবে। ওই অফিস থেকেই সব ধরণের কারিগরি সহায়তা তারা দেবে।
তারা জানান, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার প্রথম বছরেই ৯ লাখ কার্ড সরবরাহ করবে। এরপরের বছর গুলোতে যথাক্রমে ৭ লাখ, সাড়ে ৭ লাখ, ৮ লাখ এবং সাড়ে ৮ লাখ কার্ড সরবরাহ করবে তারা।
২০১১ সালের অক্টোবর থেকেই ডিজিটার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা শুরু করে বিআরটিএ। এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৭০ হাজার কার্ড ইস্যু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।