উচ্চমূল্যের বিটকয়েনকে ‘অহেতুক ভ্রম’ বলে যেসব সমালোচনা করেছেন ওয়ারেন বাফেট
বিগত কিছু মাসে বিটকয়েনের মূল্য ছোঁয় সর্বোচ্চ উচ্চতা। চলতি ধারাবাহিক দর উত্থান নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে তা ৪২ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায়। তারপর দাম কিছুটা কমে এখন লেনদেন হচ্ছে ৩৬ হাজার ডলার প্রতি ইউনিটে। ফলে পৃথিবীর প্রথম দিককার ক্রিপ্টোকারেন্সিটির সার্বিক মূল্য এখন ৬৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
বর্তমানে সমস্ত বিটকয়েনের সংখ্যা এক কোটি ৮৬ লাখ ৭৫০টি। কিন্তু, প্রতি ১০ মিনিটে নতুন ব্লক মাইনিং এ সংখ্যাটি পরিবর্তিত হতে পারে।
এখনও মাইন করা বাকি ২৬ লাখ বিটকয়েন, যা করতে বর্তমান প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় অবিশ্বাস্য ১২০ বছর! সময় লাগতে পারে।
অর্থাৎ, বিটকয়েন দেখাচ্ছে ডিজিটাল অর্থ ব্যবস্থায় লাভজনক সম্পদ সঞ্চয়ের নতুন সম্ভাবনা। অথচ সেব্যাপারে দৃঢ় সন্দেহ পোষণ করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। তিনি এ অর্থ ব্যবস্থার কট্টর সমালোচক বলেও পরিচিত।
অথচ বাফেটের সব তাচ্ছিল্যকে পরিহাস করেই একবছরের ব্যবধানে সাড়ে ৩শ' শতাংশ বেড়েছে বিটকয়েনের দর।
বিশ্বের শীর্ষতম বিনিয়োগ সংস্থা বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের মুখ্য নির্বাহী বাফেট একাধারে ষষ্ঠ সেরা ধনী। তার নির্ণয়ে অতীতে সহজে ভুল হতে দেখা যায়নি। তবু বাফেট এক্ষেত্রে হয়তো বেশ ভুলই করেছেন। বিটকয়েন নিয়ে বর্ষীয়ান এই সেরা ধনীর উল্লেখযোগ্য মন্তব্যগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
১. "ক্রিপ্টোকারেন্সির বস্তুত কোনো মূল্য নেই, কারণ তা কোনো পণ্য বা সেবা উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে না। এই অর্থ বাড়েও না। আবার কাউকে ডাকযোগে বেতন হিসেবে পাঠানো সম্ভব নয়। সোজা কথায় কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। একমাত্র অন্য কেউ যদি কিনতে আগ্রহী হয় এবং সেজন্য আপনাকে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে তাহলেই আসলে লাভবান হতে পারবেন। কিন্তু, এবার আপনার সেই একই সমস্যায় ক্রেতাকে পড়তে হবে। চূড়ান্ত হিসাবে তাই এর মূল্য শুন্য বলাটাই সঠিক" ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি'কে একথা বলেছেন তিনি।
২. "নিঃসন্দেহে এটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ, ব্লকচেইনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। কিন্তু, আদতে কিছু উৎপাদনের ক্ষমতা না থাকায় বিটকয়েনের স্বতন্ত্র কোনো মূল্য নেই। আপনি সারাদিন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কী সেখান থেকে বিটকয়েনগুলো বেরিয়ে আসবে বা এমন অলৌকিক কিছু ঘটবে? আসলে পুরো ব্যাপারটাই একটা ভ্রম ছাড়া কিছু নয়" - সিএনবিসি, ফেব্রুয়ারি ২০১৯
৩. আপনি আর আমি দুজনের যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনি, তাহলে সেগুলো দিনে দিনে বাড়বে না। সেগুলো ভোগ করার মতো সম্পদ হবে না। তার নিজের জায়গা অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমেই থাকবে। আমি আশা করি, আমি আপনার কয়েনগুলো কিনব জেনে আপনি উচ্ছসিত হবেন আর কেনার পর আমি নিজেও খুব উত্তেজিত হব। তারপর এক বাড়িতে বসেই নিজেদের মধ্যে সারাদিন বেচাকেনা করতে পারি। কিন্তু, দিনশেষে অন্য কারো কাছে এটি বিক্রি করেই আমাদের দায়মুক্ত হতে হবে"- সিএনবিসি, মে ২০১৮
৪. "সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত হয়েই বলতে পারি যে এর পরিণতি ভালো হবে না। আমি যদি পাঁচ বছর মেয়াদে সব ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে মজুদ রাখতে পারতাম, তাহলে সে বিনিয়োগ করা যথার্থ হতো। কিন্তু, যেহেতু তা করা সম্ভব নয় তাই আমি এর পেছনে কাউকে একটি পয়সা খরচ করার পরামর্শ দেব না"- সিএনবিসি জানুয়ারি ২০১৮
৫. "এটি প্রাণঘাতী বিষ ছাড়া অন্যকিছু নয়"- ২০১৮ সালে ফক্স বিজনেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকার।
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার