মেরিন ফুয়েল নিয়ে বিপাকে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত বছরের ১৪ই সেপ্টেম্বর ৭৫ হাজার টন জ্বালানি আমদানি চুক্তির আওতায় প্রথম চালান হিসেবে ১৫ হাজার টন পরিবেশবান্ধব 'লো-সালফার' মেরিন ফুয়েল আমদানি করে।
কিন্তু কর্পোরেশনটি গত পাঁচ মাসেও এই জ্বালানী বিক্রি করতে পারেনি। আমদানি পর্যায়ে ৩৫.৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে সমুদ্রগামী নৌগুলো বিপিসির কাছ থেকে উচ্চমূল্যের এই জ্বলানি খরিদ করছে না।
চুক্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত একক এই জ্বালানী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির ছয়মাসের মধ্যে জ্বালানি আমদানি করার কথা, যার মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হচ্ছে ।
ফলস্বরূপ, জ্বালানীর ব্যবহার না করেই বিপিসিকে চুক্তিভুক্ত অন্য পার্টিকে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে, দেশের সমুদ্র গামী জাহাজগুলো শ্রীলংকা এবং সিঙ্গাপুরের বন্দরগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে জ্বালানী কিনতে ভিড় করেছে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন মেরিন ফুয়েলর মূল্য এখন ৪৫০ ডলার; কিন্তু বাংলাদেশে এটি ৪৮০ ডলার।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের এনার্জি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা শামসুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কোম্পানিটির শুল্ক মওকুফ করে নেয়া উচিত ছিল ।
"এটি বিপিসির অযোগ্যতার দৃষ্টান্ত। যেসব কর্মকর্তার এর পেছনে দায়ী, সরকারের উচিত তাদের থেকে টাকা আদায় করা।"
বিপিসির চেয়ারম্যান মো আবু বকর সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তারা ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে মেরিন ফুয়েল আমদানির শুল্ক মওকুফের অনুরোধ করে দরখাস্ত প্রেরণ করেছেন।
"রিপোর্ট পাঠানোর পর, আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে মিটিং করি। তবে তাদের পক্ষ থেকে নতুন করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।"
ছয় বছর আগে, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও ) এর সদস্য দেশগুলিকে 'লো-সালফার' জ্বালানী ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছিল এবং জানুয়ারি, ২০২০ থেকে এই উদ্যোগ কার্যকর হয়।
সামুদ্রিক দূষণ রোধে , প্রতিটি জাহাজাকে ০.৫% এর বেশি সালফার বহন না করতে আইএমও ২০১৯ সালে নির্দেশনা জারি করে। নতুন এই নীতিমালার আগে,বাংলাদেশের ৩৫টিসহ সারাবিশ্বের জাহাজগুলো ৩.৫ শতাংশ সালফারজাত পদার্থ সমৃদ্ধ ফার্নেস তেল ব্যবহার করত।
বিশ্বের ৯৫ শতাংশ জাহাজের কোম্পানিই এখন পরিবেশবান্ধব উপকারিতার কথা ভেবে লো সালফার যুক্ত জ্বালানী ব্যবহারে ঝুঁকেছে।
আইএমও'র নির্দেশনা অনুসরণ করে, বিপিসি গত বছরের ১৪ই সেপ্টেম্বর থেকে লো-সালফার যুক্ত মেরিন ফুয়েল আমদানি করা শুরু করে।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও জ্বালানী আমদানিকারক এই প্রতিষ্ঠান ২২২ কোটির বিনিময়ে ৭৫ হাজার টন জ্বালানী আমদানির একটি চুক্তিও করে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিচরণকারী বিদেশি বা স্থানীয় জাহাজের কাছে প্রতি লিটার মেরিন ফুয়েল বিক্রয়ে তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো .৫৫ টাকা লাভ করবে। অন্যদিকে সমুদ্রগামী জাহাজে জ্বালানী বহনের জন্য বাঙ্কার সরবরাহকারীরা প্রতি লিটারে লাভ করবে .৫০ টাকা।