বেসরকারি খাতের ঋণ-প্রবৃদ্ধিতে হতাশা কাটছে না
কোভিডের অভিঘাত মোকাবেলা করে যে দুটি ভিত্তির উপর দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে তার একটি রেমিটেন্স ও অপরটি বেসরকারিখাতের ঋণ-প্রবৃদ্ধি।
সম্প্রতি প্রকাশিত মনিটারি পলিসি রিভিউ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন আশাবাদ তুলে ধরলেও বেসরকারিখাতে ঋণ-প্রবৃদ্ধিতে হতাশা কাটছে না। নভেম্বরের পর ডিসেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চাইতে অনেক কম।
চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ-প্রবৃদ্ধি ১৪.৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও ডিসেম্বরে এসে তা ১১.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি। ঋণ-প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ঘরেই আটকে আছে। এর পিছনে এর মূল কারণ হিসেবে কোভিডকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিমত, সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও এসব প্যাকেজের অর্থ দিয়ে বেসরকারিখাত টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু, নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়ার মত পরিকল্পনা কারো নেই।
এ প্রসঙ্গে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আরফান আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আমরা নতুন কোন প্রজেক্ট দেখছি না। কোভিডের অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি পাল্টাতে সময় লাগবে।'
এবিবি'র সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি আনিস এ. খান বলেন, 'অর্থনীতিতে কিছুটা চাহিদা তৈরি হওয়ায় ডিসেম্বরে ঋণ-প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়েছে।'
তবে কোভিডের অনিশ্চয়তা না কাটায় সামনের দিনগুলোতে ঋণ প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। 'অনিশ্চয়তার মাঝে কোন বিনিয়োগকারীই নতুন বিনিয়োগ কিংবা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে যাবে না,' তিনি বলেছেন।
তবে টিকাদান কর্মসূচি পুরোপুরি কার্যকর হলে এবং অনিশ্চয়তা কমলে; চলতি বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলে আনিস এ. খান আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কোভিডের অনিশ্চয়তাই নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার মূল কারণ, বলছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই- এর সাবেক সভাপতি একে আজাদ। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ চলে গেলেই ঘুরে দাঁড়াবে বেসরকারিখাত।
ভিন্ন মত পোষণ করে এফবিসিসিআই এর আরেক সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, কোভিডের আগে থেকেই বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। অতিমারি সেটিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার মতে, 'সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো সময় মতো বাস্তবায়ন না হওয়াই স্থবিরতার মূল কারণ। আবার অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়া অন্য কোন স্থানে শিল্প স্থাপন করলে ইউটিলিটি সুবিধা দেয়া হবে না, সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলেও বেসরকারি বিনিয়োগে গতি নেই।'
২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই (জানুয়ারি) বেসরকারিখাতের ঋণ-প্রবৃদ্ধি গতি হারায়। মার্চে দেশে মহামারী হানা দেওয়ায় সেই গতি আর ফেরেনি।
তবে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন হওয়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু তথা জুলাই থেকে ঋণ-প্রবৃ্দ্ধি বেড়ে ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছালেও অক্টোবর থেকে আবারো ৮ শতাংশের ঘরে নেমে যায়।
বেসরকারিখাতে ঋণ-প্রবৃদ্ধি না বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বাড়ছে। গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৪,৭০০ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত তারল্য ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বাড়িয়ে দিবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী।
অন্যদিকে, ঋণ-প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে না পারায়; এখাত থেকে আয় এবং মুনাফাও কমবে বলেও ধারণা করছেন তিনি।