ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা বাতিল, তবে মেয়াদি ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড়
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গেল বছর কিস্তি পরিশোধ না করার যে সুযোগ ঋণগ্রহীতারা পেয়েছিলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সেই সুবিধা আর থাকছে না। একই সময় থেকে শুরু হবে ঋণের শ্রেণিকরণও।
আজ রোববার (৩১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কোভিডের কারণে গেল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়নি গ্রাহকদের। পাশাপাশি বন্ধ ছিল ঋণ শ্রেণিকরণও।
এই সুবিধা বাতিল হলেও ঋণ পরিশোধের সময় শিথিল করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ঋণের অপরিশোধিত অংশ পরিশোধের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার ৫০ শতাংশ বাড়তি সময় পাবেন। তবে বর্ধিত এই সময় কোনোভাবেই দুই বছরের বেশি হবে না। বাড়তি সময় নির্ধারিত হবে গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের ভিত্তিতে।
যেমন ধরা যাক, কোন ঋণের মেয়াদ ৬ বছর। ১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ঋণটির মেয়াদ ২ বছর পার হয়েছে। পরিশোধের জন্য সময় আছে আরো ৪ বছর। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অবশিষ্ট ৪ বছরের ৫০ শতাংশ সময় অর্থাৎ আরো ২ বছর যোগ করে; কিস্তি পরিশোধে মোট ৬ বছর সময় পাবেন ঋণগ্রহীতা।
আবার ধরা যাক, কোন ঋণের মেয়াদ ১০ বছর। ১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ঋণটির মেয়াদ ৫ বছর পার হয়েছে। মেয়াদ বাকি আছে আরো ৫ বছর। সার্কুলার অনুযায়ী অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ মানে আড়াই বছর। যেহেতু এই সময় ২ বছরের বেশি দেয়া যাবে না, তাই উক্ত ঋণের পরিশোধের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ নয়, বরং গ্রহীতা সময় পাবেন ৭ বছর।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল স্ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই সুবিধা দেয়ার কারণে শিল্প ও সেবাখাত কোভিডের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।
সেই সাথে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই সুবিধা দেওয়ায়; ভালো গ্রাহকরাই নতুন সুবিধা নিতে পারবেন। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোন ব্যাংক এই সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা আগামী ছয় মাস বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "কোভিড এখনো চলে যায়নি। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের যে লোকসান বা ক্ষতি হয়েছে, তার প্রভাব চলতি বছরেও থাকবে। তাই কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধার মেয়াদ বাড়ালে ভালো হয়।"
বিশেষ করে, সিএমএসএমই খাতের জন্য আলাদা করে সময় বাড়ানোর পক্ষে এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য চলতি বছরের পুরোটা জুড়েই কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য কিস্তি পরিশোধের সময় আরো ছয় মাস সময় বাড়ানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন যে সুবিধা দিয়েছে- তা শুধু বৃহৎ শিল্পের জন্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শিল্পখাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, মেয়াদি ঋণ ছাড়া অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা ও প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।