মুনাফায় ফিরেছে ন্যাশনাল টি
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি লোকসান থেকে ফিরেছে মুনাফায়।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ন্যাশনাল টি লোকসান করলেও চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মুনাফায় ফিরেছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, চায়ের মান বাড়ায় বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিক্রি বেড়েছে।
কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, লকডাউনের কারণে গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ন্যাশনাল টির চা বিক্রি ৯ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল, এবং বিভিন্ন সমস্যায় তিন মাসেই কোম্পানিটির লোকসান ছাড়িয়েছিল ১৩ কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতি কাটিয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩৬.২৭ কোটি টাকার চা বিক্রি করেছে। এর ফলে মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩৫ কোটি ১ লাখ টাকার চা বিক্রি করেছে। এর আগের বছর একই প্রান্তিকে বিক্রি করেছিল ২৮ কোটি ১ লাখ টাকার চা। অন্যদিকে, কোম্পানিটি ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৮৩ লাখ টাকা লোকসান করলেও গত বছরের একই প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ২০ লাখ টাকা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসিএল) কোম্পানি সচিব এ কে আজাদ চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'মান বাড়ায় বাজারে আমাদের চায়ের চাহিদা বেড়েছে। নিলামে আমরা বেশ ভালো দাম পেয়েছি, যেটি আমাদের মুনাফায় ভূমিকা রেখেছে।'
এনটিসিএল চা-রাবার গাছ লাগানো, উৎপাদন ও বিক্রি সম্পর্কিত ব্যবসায়ের কাজ করে থাকে। কোম্পানির বার্ষিক গড় উৎপাদন প্রায় ৫.২০ মিলিয়ন কেজি।
কোম্পানিটি উৎপাদিত চায়ের বড় অংশ চট্টগ্রাম নিলাম মার্কেটের মাধ্যমে বিক্রি করে। ২০০০ সালে তারা স্বল্প পরিসরে চায়ের স্থানীয় বিপণন শুরু করে।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই কোম্পানির ১২টি টি এস্টেটে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
চা শিল্পের বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশিদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের ফলে এখন সব শ্রেণি-পেশার মানুষই চা পান করেন। এ মুহূর্তে এ খাতে বাণিজ্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার।
বাংলাদেশি চা সংসদ-মহাসচিব এম শাহ আলম টিবিএসকে জানান, দেশে চায়ের ভোগ বেড়েছে। আশির দশকে দেশে যে চা উৎপাদন হতো, তার ৮০ শতাংশই রপ্তানি হয়ে যেত। বর্তমানে যা উৎপাদন হয়, তার ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশই দেশের বাজারের জন্য লাগে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ও চা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে চা উৎপাদন ছিল তিন কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার কেজি। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। অর্থাৎ, চার দশকে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের বিপনন কর্মকর্তা আহসান হাবিব টিবিএসকে জানান, ২০২০-২১ নিলাম বর্ষে (এপ্রিল ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৩৪টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে; এতে ১৮৮.০৮ টাকা কেজি ধরে ৭ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে এবং শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত ১৫টি নিলামে ১৭১.৭৮ টাকা কেজি দরে ৭ লাখ ৯৫ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, লন্ডনভিত্তিক 'ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি' প্রকাশিত ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম। তাদের হিসাবে, বিশ্বের মোট চায়ের ২ শতাংশই উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। একটানা কয়েক বছর ধরেই দশম অবস্থানে ছিল এ দেশ।
গত শতাব্দীর শেষে চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, ১৯৮৯ সালে ছিল ১২তম।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা বছরে ৯ কোটি কেজি। ২০১০ সাল থেকে এই চাহিদা পূরণ করতে চা আমদানি শুরু হয়।