ভয়, সন্দেহ কাটিয়ে টিকাকেন্দ্রগুলোতে বেড়েছে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের ভিড়
প্রথম দুই দিনের তুলনায় গণ টিকাদান কর্মসূচীর তৃতীয় দিনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভ্যাকসিন গ্রহীতার ভিড় বেড়েছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিশিষ্টজন ও সরকারের ঊধ্বতন কর্মকর্তারা ভ্যাকসিন নেয়ায় ও ভ্যাকসিনের তেমন কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না হওয়ায় মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় ও সন্দেহ কমেছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন ভ্যাকসিন কেন্দ্রে আগের দুদিনের তুলনায় ভিড় বেশি ছিলো।
রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে ৮টি বুথে মঙ্গলবার ১,৪৯৭ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এর আগের দিন সেখোনে ৮৯৮ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার ৫০০ জনকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারে ভ্যাকসিন নিয়েছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ভ্যাকসিন নিয়ে আগে কিছুটা ভয় থাকলেও এখন আর নেই। সরকার আমাদের হাজার টাকা দামের করোনাভাইরাসের দুই ডোজ ভ্যাকসিন ফ্রি দিচ্ছে, সরকার আমাদের জন্য অর্থ ব্যয় করছে। আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারকে সহায়তা করবোনা কেন'!
৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়। প্রথম দিন ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৩১,১৬০ জন ও দ্বিতীয় দিন ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৪৬,৫০৯ জন।
বাংলাদেশ প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যাদেরই সুযোগ হবে তাদেরই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মানুষকে সাহস করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিন পরীক্ষিত। ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় বা সন্দেহের কারণ নেই। আমি নিজে ভ্যাকসিন নিয়েছি এবং ভালো আছি'।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'ভ্যাকসিন নেয়া মানে শুধু নিজেকে সুরক্ষিত করা নয়, দেশ থেকে করোনামুক্ত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপও। বাংলাদেশের কাছে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে, আরো ভ্যাকসিন আসবে। এখন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে এবং দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। তাহলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সহজ হবে'।
এখন ৪০ বছর বয়সী নাগরিক এবং সম্মুখসারিতে থাকা ১৯টি শ্রেণিপেশার নাগরিকরাই www.surokkha.gov.bd ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪:৪০ পর্যন্ত ৬, ৯০০৬৩ জন ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধন করেছেন।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথম দিকে কারও কারও মধ্যে ভয় থাকলেও এখন তা কেটে গেছে বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, 'যতটা ভয়ভীতি ছিল, এখন একেবারেই নাই, একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে'।
আবদুল মান্নান বলেন, 'মানুষের সারি বেঁধে আছে, একের পর একজন আসছে এবং টিকা দেওয়ার কোনো ঝামেলা নাই। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছি, কিন্তু সবাই জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার পর কোনো অস্বস্তি তারা বোধ করছেন না'।
সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি মানুষ আসবে এবং সামগ্রিক পরিবেশ আরও বেশি উৎসবমুখর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব।
সব প্রাথমিক শিক্ষককে ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিকা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিকার প্রতি আতঙ্ক কেটে গেছে। করোনাভাইরাসের টিকায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তিনি শতভাগ সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, 'নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ রাখুন'।
ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ কোভ্যাক্সের ১.৩১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ
স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ কোভ্যাক্স থেকে কোভিড-১৯ এর ১.৩১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।
কোভ্যাক্স কর্মসূচীর আওতায় ২০২১ সালের প্রথমার্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।
বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)-এর নেতৃত্বাধীন জোট কোভ্যাক্স।