গ্রামীণ জনপদের আগ্রহে এজেন্ট ব্যাংকিং একাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ
ব্যাংকিং সেবা নিতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। করোনার মত মহামারীতেও তারা ব্যাংকবিমুখ ছিলেন না। বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে আয় কমলেও সঞ্চয়ের মানসিকতা বেড়েছে প্রান্তিক জনপদে থাকা অধিবাসীদের।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নারীদের মাঝে ব্যাংকিং সেবা নেয়ার আগ্রহ ব্যাপক বেড়েছে। পাশাপাশি তাদের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি গ্রামীণ জনপদে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত 'কোয়াটার্লি রিপোর্ট অন এজেন্ট ব্যাংকিং' প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় গেল বছর এজেন্ট ব্যাংকিং এর একাউন্ট সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এসব একাউন্টের সিংহভাগই (প্রায় ৮৭%) গ্রামাঞ্চলে।
একাউন্টগুলোতে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই করছে। রেমিটেন্স আসার পরিমাণও তিনগুণ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বিতরণের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং; কেননা সুবিধাভোগীরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের দোরগোড়ায় এ পরিষেবা পাচ্ছে।
আমানত বৃদ্ধির তুলনায় গেল এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যম ঋণ বিতরণ অনেক বেড়েছে।
ঋণের দুই তৃতীয়াংশ বিতরণ করা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে (আউট স্ট্যান্ডিং) ১,২৩৫ কোটি টাকা। বাকি ঋণ শহরাঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে।
ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। নারী ঋণগ্রহীতা মাত্র ৯ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে নারীদের ঋণ নেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭০ কোটি টাকা। যেখানে পুরুষরা নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
নারীদের ঋণ গ্রহণ কম হলেও এর ইতিবাচক ভূমিকা বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামাঞ্চলে মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা চিন্তা করে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধিদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সিএমএসএমই এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে উৎসাহিত করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিক্স এর অধ্যাপক ড. মাহবুব আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গ্রামীণ এলাকায় পড়ে থাকা অলস সঞ্চয় মূলধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে এই ব্যাংকের নেতিবাচক দিক হলো, গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা আমানত, ঋণ হিসেবে শহরে বিতরণের প্রবণতা বেশি। একে এক ধরনের পুঁজি পাচার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঋণের বেশির ভাগই গ্রামে বিতরণ করতে হবে, এতে গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে।
নারীর ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সামান্য হলেও একাউন্টধারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষ ও নারী একাউন্টধারীদের মধ্যকার ব্যবধানটি ক্রমশ কমে আসছে, যা আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নারীদের বর্ধিত অংশগ্রহণকেই নির্দেশ করে।
গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে শুধু এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে তা নয়, বরং এই সেবা দেয়ার মাধ্যমে যে ব্যবসার সুযোগ এবং চাহিদা বেড়েছে সেটিও ফুটে ওঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।
এতে দেখা যাচ্ছে, গেল বছর করোনার মাঝেও এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসার চাহিদা বাড়ায় এজেন্ট সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে আউটলেটের সংখ্যাও।
গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে ২৬টি ব্যাংক ১১,৯২৫ জন এজেন্টের সহায়তায় ১৫,৯৭৭টি আউটলেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে।
আউটলেট, একাউন্ট সংখ্যা ও আমানত সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক।
অন্যদিকে ঋণ বিতরণে এগিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও সিটি ব্যাংক। আর অর্ধেক রেমিটেন্সই এসেছে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অংশগুলোতে এজেন্টদের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে।
মূল উদ্দেশ্যটি হলো সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যারা ভৌগলিকভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন, যাদের কাছে মূলধারার ব্যাংকিং পরিষেবা পৌঁছতে পারে না, তাদের জন্য একটি নিরাপদ এবং বিকল্প ব্যাংকিং সেবা চালু করা।