ভ্যাকসিন গ্রহণের অসাধারণ অভিজ্ঞতা!
অন্যান্য অনেকের মতোই সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবলে চিন্তিত হয়ে পড়ি। অব্যবস্থাপনা, নোংরা পরিবেশ ও রূঢ় ব্যবহার দেখেই অভ্যস্ত আমি। হাসপাতালগুলোতে সবসময়ই অনিয়ন্ত্রিত জনসমাগম থাকে। দীর্ঘ লাইনে সবাইকেই অপেক্ষমান রেখেই বিশেষ সুবিধা নিতে দেখা যায় ভিআইপিদের।
তবে সরকারের টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রে এ চিত্র একেবারেই ভিন্ন। গত বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি তা অসাধারণ- সচরাচর এধরণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়না।
আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছি।
ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করেছি, নিবন্ধনের পরই নিবন্ধন হয়েছে জানানো হয় ক্ষুদেবার্তায়। তারপর ১০ ফেব্রুয়ারি এক ক্ষুদেবার্তায় জানানো হয় ১১ ফেব্রুয়ারি আমার ভ্যাকসিন গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।
আমি যখন আমার সহকর্মীদের সাথে ভ্যাকসিন নিতে গেলাম, বিশাল জনসমাগমের মুখে পড়ার প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিলাম। তবে পরিস্থিতি একদমই এমন ছিল না।
হাসপাতালের নতুন নির্মিত ভবনটি বেশ বিস্তৃত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রথমেই আমার নিবন্ধন ও ফিরতি এসএমএস দেখতে চাওয়া হয়। যে কেউ যাতে টিকাদান কর্মসূচির প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে না পারে তাই নিশ্চিত করা হচ্ছিল।
ভবনে প্রবেশের পরেই হেল্পডেস্কের দিকে এগুলাম। ভ্যাকসিনেশন বুথের নাম্বার লেখা একটি স্লিপ দেওয়া হলো।স্লিপ দিয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হলো।
"আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?" জিজ্ঞাসা করেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৪২০০ স্বেচ্ছাসেবী তরুণের একজন। তার সাথেই আমরা টিকাদানের মূল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলাম। অনেকেগুলো বুথ পেরিয়ে নিজেদের বুথে পৌঁছালাম।
বুথে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দুজন নার্স ও নিবন্ধন পরীক্ষণ ও পূরণের জন্য দুজন কাজ করছিলেন। সম্মতি আছে মর্মে সই করে ফোন নম্বর দিতে হলো ফর্মে। আমার ফর্মে আজকের তারিখ সহ ভ্যাকসিনের পরবর্তী ডোজ গ্রহণের তারিখ লিখে দেওয়া হয়।
প্রথমে যখন নার্সদের কাছে গেলাম, তারা আরেকজনকে ভ্যাকসিন দিচ্ছিলেন। একজন নার্স ইনজেকশন সিরিঞ্জ হাতে নিয়েই বললেন, 'তাকাবেন না'। তবে ইনজেকশন দেওয়ার পুরো সময় তাকিয়েই ছিলেন ওই ব্যক্তি। তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই বুঝতে পারলাম ওই নার্স কেন তাকে তাকাতে নিষেধ করেছিলেন।
আমি ইনজেকশন ভয় পাইনা, তবে বাস্তবে কখনো ইনজেকশনের সুঁই মাংসের এতো গভীরে ঢুকে যাওয়া দেখিনি, তাই কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম।
আমার পালা চলে এলো, নার্স আমাকেও তাকাতে নিষেধ করে বললেন, "মাসল রিল্যাক্সড রাখুন"।
আমি কিছুটা ব্যথা পাবো ভাবলেও, ব্যথা লাগেনি একদমই। নার্স এতো দ্রুততার সাথে দিয়েছিলেন যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে যায়। তারপর আমাকে আধা ঘন্টার মতো বিশ্রাম নিতে বলা হয়।
১০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের সবার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে যায়।টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপারে অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়েই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসি।
আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, ঢাকার অন্যান্য কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি কেমন চলছে?
যারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে গিয়েছিলেন, তারাও একইরকম অভিজ্ঞতার কথা জানান। ভ্যাকসিন প্রদানে নিয়োজিত শহরের ৪৬টি হাসপাতাল এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বেশিরভাগেরই অবস্থা সন্তোষজনক।
এই অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা যায়, সরকার কোনো কাজে মনোযোগ নিবদ্ধ করে কাজ করলেই তা অসাধারণ হয়।
লেখক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক
- মূললেখা: The awesome vaccination experience!