এবার ঢাকার লেকগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব চাইলেন মেয়র আতিক
ওয়াসার কাছ থেকে খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর এখন ঢাকার লেকগুলোরও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব চাইলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
আতিকুল বলেন, "ঢাকার খালগুলোর মতো লেকগুলোও আমাদের দেয়া হোক। লেকগুলোতে আমরা স্বচ্ছ পানির প্রবাহ এনে দেবো। একটার সাথে আরেকটা সংযুক্ত করে দেবো।"
ঢাকার পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ডিএনসিসি আয়োজিত "ভালোবাসা দিবস একদিন শহরকে ভালোবাসি প্রতিদিন" শীর্ষক এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "বারিধারা, গুলশান, উত্তরা ও হাতিরঝিল লেকগুলো আমাদের দিন, আমরা পানিতে অক্সিজেন বাড়াবো। স্বচ্ছ পানি প্রবাহের অবস্থায় নিয়ে আসবো। এখানে মাছের চাষ হবে '।
"গুলশান বারিধারার মতো এলাকায় যেখানে একটি ফ্ল্যাটের দাম ২০-৩০ কোটি টাকা, সেই ফ্ল্যাটে বাস করে পয়ঃবর্জ্যের লাইন্ও নির্দয়ভাবে লেকের মধ্যে দিয়ে দিলেন। দেয়ার আগে কোন ধরণের ভাবনা চিন্তা করলেন না" বলেন আতিক।
কোন ধরণের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা নেয়া হবে, পয়ঃবর্জ্য কিভাবে কোন পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হবে, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে; এসব বিষয়ে প্ল্যানার্স, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, পরিবেশ অধিদফতর, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, এনজিওসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তাজুল বলেন, "পয়ঃবর্জ্য, পিকাল স্লাজ, কঠিন ও তরল বর্জ্য; এগুলো কিভাবে ম্যানেজ এবং ডিজপোজ করা যায় এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। শুধু কালেকশন আর ম্যানেজ করলেই হবে না। এগুলো পরিশোধন করে ডিসপোজও করতে হবে।"
"কিভাবে আমরা শহরটাকে নষ্ট করে দিয়েছি এ নিয়ে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। ওয়াসার কোন দোষ দেখি না। এখন থেকে কিভাবে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা যায় সেদিকে নজর দিয়েছি। এখন জনসংখ্যা কেমন, ভবিষ্যতে কত হবে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ড্রেন কতটুকু থাকবে। কত মানুষের কথা চিন্তা করে সুয়ারেজ ম্যানেজম্যান্টের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বিষয়ে সকলে একসাথে বসে নির্ধারণ করতে হবে"।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বর্তমান সেনিটেশন ব্যবস্থা আর ভবিষ্যত করনীয় বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মুজিবুর জানান, "ঢাকার ১৬০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২ মিলিয়ন মানুষ স্যুয়ারেজ সিস্টেমের মধ্যে আছে। যা ঢাকার মোট জনসংখ্যার ১. ২৫ শতাংশ। বাকিরা অনসাইট সিস্টেমে আছে। যেখানে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করা হয় না।"
"৭১ শতাংশ বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য যাচ্ছে ড্রেন আর লেকে যার ফলে অপরিশোধিত বর্জ্য চলে যাচ্ছে নদীতে। ভ্যাকুয়াম ট্রাকের মাধ্যমে সেপটিক ট্যাংক থেকে যে পয়ঃবর্জ্য কালেক্ট করা হচ্ছে তাও পার্শ্ববর্তী ড্রেনে ফেলে দিতে দেখা গেছে" বলেন তিনি।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ২০২৩ সাল পর্যন্ত করনীয় একটি স্বল্পমেয়াদী রুপরেখা বর্ণনা করেন। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডেভেলপার, এনজিও, সিভিল সোসাইটি, একাডেমিয়াকে যুক্ত করে কর্মবন্টনের কথা বলেন।
সেপ্টিক ট্যাংক পরিস্কার করে সেই বর্জ্য ফেলার জন্য এখনো কোন জায়গা করা হয়নি। কোন স্থানে ডিজপোজ করার আগে সেই বর্জ্য পরিশোধনের প্রয়োজন হবে।
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, "দেড় বছরের মধ্যে দাশেরকান্দি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেখানে এ ধরণের বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকার ১০০% সুয়ারেজ নেটওয়ার্ক ও বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ৫ টি পৃথক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে।"
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহানসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। তারা প্রত্যেকে আগে একটি সঠিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার উপর জোর দেন। কোন অংশটি সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে তা নির্দিষ্ট দায়িত্ব বন্টন করে তারপর আগানোর পরামর্শ দেন তারা।