পরমাণু প্রকল্পে আকস্মিক পরিদর্শন বন্ধ করার হুমকি দিল ইরান
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র না ফিরলে, আগামী সপ্তাহ থেকে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের পারমাণবিক প্রকল্প পরিদর্শন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। গত সোমবার এক ঘোষণার মাধ্যমে দেশটি আকস্মিকভাবে পরমাণু প্রকল্প পরিদর্শন বন্ধের হুমকি দেয়।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক- জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় তেহরানের পক্ষ থেকে চালা হলো নতুন এই চাল। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো কাটিয়ে উঠতেই পারমাণবিক চুক্তিতে ফেরার পরিকল্পনা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সাথে ইরানের উপর চাপানো হয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এরপর থেকেই ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির দিকে নজর দেয়। নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেসিপিওএ চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন এবং তেহরান উভয় পক্ষই চাচ্ছে প্রথম পদক্ষেপটা বিপরীত দিক থেকেই আসুক।
এর আগে ইরান স্বেচ্ছায় জেসিপিওএ-র অতিরিক্ত এক প্রটোকল মানতে সম্মত হয়। প্রটোকল অনুসারে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সির (আইএইএ) পরিদর্শকরা অঘোষিতভাবে বা আগে থেকে না জানিয়ে পরমাণু স্থাপনা পরীক্ষার জন্য প্রকল্প পরিদর্শন করতে পারবেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ সোমবার বলেন, "২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকিরা শর্ত না মানলে, ইরান সরকার স্বেচ্ছায় অনুমোদন দেওয়া অতিরিক্ত প্রটোকল ব্যবস্থা বন্ধ করে দিবে। তবে, সবই বিপরীত হতে পারে যদি প্রতিপক্ষ তাদের পথ পরিবর্তন করে নেয়।"
ইরান যখন জনসম্মুখে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে উত্তপ্ত সব বাক্যবাণ ছুড়ছে, তখন ইরানী কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের অর্থনীতির দুর্দশা স্বীকার করে নিয়েছেন । ফলে দেশটি জেসিপিওএ চুক্তিতে ফেরার মাধ্যমে সমঝোতা করতে বাধ্য হতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে অস্বীকার করলেও, দেশটির ইনটেলিজেন্স মন্ত্রী মাহমুদ আলাভি গত সপ্তাহে বলেন যে, পশ্চিমাদের ক্রমাগত চাপের কারণে দেশটি 'কোণঠাসা বিড়ালে'র মতো প্রতি-হামলা চালাতে বাধ্য হতে পারে, এমনকি বোমা নির্মাণের চেষ্টাও করতে পারে।
তবে, সোমবার ইরানের অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রচ্ছন্ন হুমকির দায়ে এ মন্ত্রীকে তিরষ্কার করেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ খামেনির এক ফতোয়ার কথা উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "ইরানের অবস্থান একই আছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ ছিল এবং থাকবে।"
তবে, তেহরান নিশ্চিতভাবেই কিছু গোপন করছে বলে মন্তব্য করেন সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হামদান আল-শেহরি। আরব নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "ইরানের দিক থেকে অবস্থার ক্রমাগত উত্তরণের কারণে আমরা উদ্বিগ্নতার সাথে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।"
"সম্প্রতি তারা সেন্ট্রিফিউজ সংখ্যা এবং ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম মজুদ বৃদ্ধির কথা কথা জানায়, বিষয়টি বিপজ্জনক। এরপর আমরা জানতে পারি যে, ইরান ইউরেনিয়াম ধাতুর উৎপাদন শুরু করেছে। সেটা হল আরেক বিপদ। আর এখন তার কয়েকদিন আগে বলা হল যে, কোণঠাসা হয়ে পড়লে, তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধ্য হতে পারে।"
আল-শেহরির মতে, "আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সির পরিদর্শকদের কাজে বাঁধা দেওয়া প্রমাণ করে যে, ইরানের লুকোনোর মতো কিছু আছে এবং তারা পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার ঘোষণা দিতে পারে।"
- সূত্র: আরব নিউজ