দ্রুত ‘আদিবাস নীতিমালা’ প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
দেশের প্রায় ৩ মিলিয়ন আদিবাসি জনগনের অর্থনৈতিক, ভূমি, শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতে দ্রুত 'আদীবাস নীতিমালা' প্রনয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নীতিমালা না থাকায় আদিবাসীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তারা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে পৌছালেও, আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের নানা মৌলিক ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ফলে দেশের মূল ধারা থেকেও তারা অনেক দূরে। তারা মূল ধারার অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকার একটি নীমিালা প্রণয়ন করার পর, সেটি অনুযায়ী কাজ করলে পিছিয়ে পড়া এসব জনগৌষ্ঠিকে মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আসাদ এভিনিউ এলাকায় ওয়াইডব্লিউসিএ সম্মেলন কেন্দ্রে- ইনডেজেনাস পিপলস ডেভেলপনেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস) আয়োজিত 'বাংলাদেশে আদিবাস নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে মত-বিনিময়' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মানবাধিকার, উন্নয়ন কর্মী ও আদিবাসী নেতারা।
আইপিডিএস সভাপতি সঞ্জিব দ্রং এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম। আলোচনায় অংশ নেন রাশেদ খান মেনন এমপি, অরোমা দত্ত এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ইউএনডিপি'র প্রধান কৌশলগত পরামর্শক অ্যান্ড্রু ম্যাকগ্রেগর।
মূল প্রবন্ধে সঞ্জিব দ্রং বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধোনীতে নৃতাত্বিক গোষ্ঠিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে পিছিয়ে পরা এই জনগৌষ্ঠিকে এগিয়ে নিতে পদক্ষেপে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও, ২০০৭ সালে আদিবাসী জনগণের অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র এবং আইএলও কনভেনশন ১৬৯-এর ঘোণাপত্রে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায় আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে একটি নীতিমালা করার নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও, বাংলাদেশ সরকার সেটি করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম এনডিসি বলেন, এই উদ্যোগটা বেশ অনেক আগের। সরকারের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়াও এই নীতি প্রণয়নে কোন জায়গায় সমস্যা রয়েছে- তা খুজে বের সমাধান করে এগোতে হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, আদিবাসীরা তাদের মূল ভুখন্ড থেকে যখন-তখন উচ্ছেদ হচ্ছে। এখনো তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত হয়নি। সরকার এসব বিষয়ে কাজ করছে।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, দেশের সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় ৫০ রকম সম্প্রদায়ের প্রায় ৩ মিলিয়ন আদিবাসী রয়েছে। এই বড় অংকের নাগরিকরা পিছিয়ে থাকলে দেশ এগোতে পারবে না। বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পার্বত্য এলাকার আদিবাসীদের জন্য কার্যকরী ভূমি কমিশন করার কথা বললেও সেটি হয়নি। তাদের ভাষা সংরক্ষণে নেই কোনো উদ্যোগ, শিক্ষা নিশ্চিতেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। এছাড়া স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক অধিকারের বিষয়েও সরকারের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, এসব নিশ্চিত করতে হলে 'আদিবাস নীতিমালা' প্রনয়নের কোনো বিকল্প নেই। পার্শবর্তী দেশ ভারতে এরকম নীতিমালা অনেক আগেই প্রণয়ন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।