‘আনন্দের দিনে’ ছাত্রলীগকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানালেন জাবি উপাচার্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে কাজটি’ করায় ছাত্রলীগের কাছে তিনি ‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ’।
মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করে রাখা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের চালানো হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান এই সংকটের মধ্যেই জরুরী সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি বিকেল সাড়ে ৫ টার মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের হল খালি করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
বাসভবন থেকে পুলিশ, ছাত্রলীগ এবং উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের পাহারায় বের হওয়ার পর নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার জন্যে এটা অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। এই কারণে যে, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যারপরনাই আমাকে অপদস্থ করা হয়েছে। অসম্মান করা হয়েছে। কিন্তু, কোনো প্রমাণ ছাড়াই। যদি প্রমাণ পায় তাহলে যা বিচার হবে আমি মেনে নিবো।”
আন্দোলনকারীদের সরিয়ে তাঁকে উপাচার্যভবন থেকে বের করে আনাকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ মন্তব্য করে এ জন্য ছাত্রলীগকে ‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা’ জানান অধ্যাপক ফারজানা।
তিনি বলেন, “দেশের একটা জাগরণের সুযোগ এসেছে যে আমরা সত্য কথা বলার সুযোগ পাব কি না। আজ মানুষের জেগে ওঠা আমরা দেখেছি। আমার সহকর্মী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সব ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রলীগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজটি করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সবাই আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।”
ছাত্রলীগের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, “কারণ ছাত্র হিসেবে ওরা (ছাত্রলীগ) এতোদিন ধরে ধৈর্য রেখেছে। ওরা কিন্তু তখন মাঠে নামেনি। কিন্তু, শিবির যখন এর (আন্দোলন) সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে, তখন প্রতিবাদ করাকে আমি মনে করি, তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে।”
এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিরোধী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে উপাচার্যকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখলে মঙ্গলবার সকাল সোয়া এগারোটার দিকে উপাচার্যপন্থী একদল শিক্ষক উপাচার্যকে বাসভবন থেকে তাঁর অফিসে নিয়ে যেতে আসেন।
তবে আন্দোলনকারীদের সাথে বাকবিতণ্ডার পর তাঁরা ব্যর্থ হলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে উপাচার্যের বাড়ির সামনে যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চড়াও হতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, ছাত্রলীগের হামলায় আটজন শিক্ষক ও অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ছাত্রলীগ বলছে, উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে যারা আন্দোলন করছে তাঁরা ‘শিবির’ কর্মী।
উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উসকানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থি শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।”
হামলার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।”
এর আগে রোববার রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আলোচনা ‘ব্যর্থ’ হলে সোমবার সন্ধায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানার নিয়ে উপাচার্যের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ‘ছাত্রলীগকে চাঁদা দিয়েছেন’ এমন অভিযোগ এনে গত আড়াই ধরে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।