সাত বছর পর আবার ইউরোপে রপ্তানি শুরু হচ্ছে ‘সীডলেস লেবু’
দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর আবার ইউরোপের বাজারে 'সীডলেস লেবুর' রপ্তানি শুরু হচ্ছে। লেবুতে ক্যাঙ্কার নামক ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ফাঙ্গাল ডিজিজ এর উপস্থিতি পাওয়ায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের লেবু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭-৮ তারিখে বাংলাদেশ থেকে সীডলেস লেবু রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সামছুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা আগামী সপ্তাহেই রপ্তানির অনুমতি দিয়ে দিব। কারণ লেবুতে যেসব রোগ বালাইয়ের সমস্যা ছিল সেগুলো এখন আর নেই।'
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লেবু রপ্তানি হয়। এ তালিকায় ছিল জারা, কাগজি ও সীডলেস লেবু। তবে ইউরোপে ২০১৩-১৪ সালে সব ধরনের লেবু পরীক্ষার পর শুধুমাত্র সীডলেস লেবুতে ক্যাঙ্কার নামক ব্যাংকটেরিয়া ও কিছু ফাঙ্গাল ডিজিজধরা পড়ে। একই কারণে কাগজি লেবুতেও কিছু রোগ ধরা পড়ে।
তখন ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সীডলেস লেবু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটি প্রতিনিধি দল এসে বাংলাদেশে লেবুর বাগান পরিদর্শন করে এবং কীভাবে এই রোগমুক্ত লেবু উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে।
এই পরমার্শ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবুচাষীদের নিয়ে ক্লাষ্টার তৈরি করা হয়। সিলেটের জৈন্তাপুর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, শ্রীমঙ্গল, মধুপুর সহ কয়েকটি স্থানে এসব ক্লাস্টার তৈরি করা হয়। এছাড়া নরসিংদিতে জারা লেবুর বেশ কয়েকটি ক্লাষ্টার তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ডিএই এর সহযোগীতায় এখন ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাল ডিজিজ মুক্ত লেবু চাষ হচ্ছে।
জানা গেছে, জারার পাশাপাশি সীডলেস লেবু রপ্তানি শুরু হলে পরিমাণ রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এতে করে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণও বাড়বে।
কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের এসোসিয়েশন বিএফভিএপিইএ এর উপদেষ্টা মো. মনজুরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এসোসিয়েশন ও সরকারের যৌথ উদ্যোগের কারণেই রোগমুক্ত লেবু উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে ইউরোপের বাজারে আবার লেবু রপ্তানি শুরু করতে পারছি।'
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্লাষ্টারগুলোতে এখন আর লেবুর রোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে নতুন করে রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে সরকার।
উল্লেখ্য, কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ সংগনিরোধকেন্দ্র থেকে অনুমতি নিতে হয়।
শ্যামপুর কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগামী রবিবার আমরা কয়েকটি ক্লাষ্টার পরিদর্শন শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে লেবু রপ্তানির অনুমতি দিয়ে দিব। এর পর থেকে সীডলেস লেবু রপ্তানিতে আর কোন বাধা থাকবে না।'
সিলেটের একটি ক্লাষ্টারের লেবু চাষী মো. বিপুল। তিনি প্রায় ১০ একর জমির উপর সীডলেস লেবুর বাগান করেছেন। রপ্তানি শুরু হলে তিনি লেবুর ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন।
মো. বিপুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ক্যাঙ্কার রোগের সংক্রমন হলে লেবুর গায়ে এক ধরনের দাগ পরে। আর কিছু রোগ আগে যেগুলোতে লেবুর গায়ে ছত্রাকের মত সাদা সাদা হয়ে যায়, খোসা খসখসে হয়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'ক্লাষ্টার করার পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং শুরু করে। আমাদের নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে। এগুলো মেনে আমরা এখন রোগমুক্ত লেবু চাষ করছি।'
বিভিন্ন ক্লাষ্টারের কয়েকজন লেবু চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর যখন মুকুল আসে তখন প্রতি ১০ দিনে ১ বার করে ঐষধ প্রয়োগ করতে হয়। এক মাস সময় এই ঐষধ দিলে আর ক্যাঙ্কার রোগের সংক্রমন দেখা দেয় না।
উদ্ভিব সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২২ মেট্রিক টন। পরের বছর দ্বিগুণেরও বেশি লেবু রপ্তানি হয় যার পরিমাণ দাড়ায় ৮৮০ মে টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৫০ মে টন লেবু রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি হওয়া এই লেবুগলো জারা লেবু নামে পরিচিত। বর্তমানে ইউরোপে প্রতি কেজি লেবুর রপ্তানি মূল্য সাড়ে তিন-পৌনে চার পাউন্ড।
বিএফভিএপিইএ বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৬৪.৫ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে ২৫-৩০ ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।